রি-এন্ট্রি ভিসা বন্ধ রেখেছে ইতালির দূতাবাস
পোস্ট ডেস্ক : ইতালিতে বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও নতুন করে ভিসা ইস্যু করছে না ঢাকার ইতালির দূতাবাস। শুধু যাদের বৈধ ভিসা আছে তাদের সে দেশে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। আর যাদের আবাসিক অনুমতিপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ভিসার জন্য কেবল তাদের আবেদন বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। ইতালির পুলিশ তাদের তথ্য যাচাই করে জানানোর পর ভিসা দেওয়া হবে। তাত্ক্ষণিকভাবে এ যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছেন ইতালির রাষ্ট্রদূত।
এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেয়াদ শেষ হওয়া অভিবাসীদের ইতালিতে প্রবেশ করতে হলে রি-এন্ট্রি ভিসা নিতে হবে। এতে বিপাকে পড়েছেন ইতালিপ্রবাসীরা। কারণ ইতালিতে বাংলা-দেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, লকডাউনসহ নানা কারণে দেশে এসে আটকা পড়া হাজার হাজার প্রবাসীর ভিসা ও রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা ভর করেছে। ভিসার মেয়াদ সংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি ও ফিরে যাওয়ার দাবিতে গত ১১ অক্টোবর ঢাকায় ইতালি দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন করে আটকে পড়া প্রবাসীরা। দূতাবাস থেকে সাত দিন সময় চেয়ে নেওয়া হয় তখন। সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ইতালি। এক্ষেত্রে যাদের অনুমতিপত্রের মেয়াদ (স্টে পারমিট) আছে, শুধু তাদের জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। আপাতত নতুন করে কাউকে ভিসা দেওয়া হবে না। তবে যাদের আবাসিক অনুমতিপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, ভিসার জন্য তাদের আবেদন বিবেচনা করা হবে। বসবাসের অনুমতিপত্রধারীদের যাওয়ার পথ খুললেও ঢাকায় ইতালি দূতাবাস নিয়মিত ভিসা ইস্যু করা এখনো বন্ধ রাখছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশি যাদের পরিবার-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী কিংবা সন্তান ইতালিতে রয়েছেন তারা সহজে প্রবেশ করতে পারবেন দেশটিতে। আর বৈধ ভিসাধারী অন্যদের ক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তার প্রয়োজনীয়তার কথা ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করতে হবে। তবে সবার জন্য ইতালিতে প্রবেশ করতে হলে একটা ঘোষণাপত্রে নিজের কর্মস্থান, আসার পর যেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন সেই জায়গার কথা এবং নিজের বাসার ঠিকানা ও ফোন নম্বর উল্লেখ করে এয়ারপোর্টে জমা দিতে হবে। অনলাইনেও পূরণ করা যাবে তথ্যপত্র। জানা গেছে, কোভিড-১৯-এর কারণে বাংলাদেশে আটকা পড়েছেন প্রায় ১২ হাজারের মতো ইতালিপ্রবাসী। তাদের অধিকাংশ গত বছর শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন আবার কেউ কেউ কোভিড মহামারি আকার ধারণ করার পর দেশে ফেরেন। তারপর আটকে যান।
বিমানের বিশেষ ফ্লাইট রোম যাবে ২৮ অক্টোবর: ঢাকা থেকে ইতালির রোমে একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ফ্লাইটটি আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা ছেড়ে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ৭ জুলাই ইতালির রোমের ফিউমিসিনো ও মিলানের মালপেনসা বিমানবন্দরে অবতরণ করা ১৮২ বাংলাদেশির মধ্যে ১৬৭ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। দুটি ভিন্ন ফ্লাইটে এই দুই বিমানবন্দরে অবতরণ করা হলে তাদের নামতে না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে একটি ফ্লাইটের দুই ডজনের বেশি বাংলাদেশি আরোহীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় ইতালি। এরমধ্যে কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ গত ১৪ অক্টোবর শেষ হয়েছে। তবে এবার আর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায়নি ইতালি।
১ নভেম্বর থেকে ইতালি ফিরবেন প্রবাসীরা: এদিকে করোনা ভাইরাস মহামারিতে ছুটিতে দেশে এসে আটকেপড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইতালিতে ফিরতে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে তুরস্কের বিমান সংস্থা টার্কিস এয়ারলাইন্স। এ উদ্যোগের ফলে অনেক চিন্তার অবসান হলো বৈধ ভিসাধারী প্রবাসীদের। আবার অনেকের ভিসার মেয়াদও ফুরিয়ে আসছিল। ফলে টার্কিস এয়ারলাইন্সের এ উদ্যোগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন তারা। গতকাল থেকে ঢাকার গুলশানে টার্কিস এয়ারলাইন্সের তরফ থেকে ফরম বিলি করে টিকিট ইস্যু করা হচ্ছে। কেউ কেউ এয়ারলাইন্সের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মেনে ফরমফিলাপ করে টিকিটও পেয়েছেন। যদিও কেউ কেউ টিকিট না পেয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। আগামী ১ নভেম্বর ইতালিগামী বিমানে উঠবেন তারা। তবে এর ৭২ ঘণ্টা আগে অবশ্য তাদের কোভিড পরীক্ষার ফল জমা দিতে হবে।