শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা কমিয়ে ফের বিজ্ঞপ্তি
নিজ মেয়ে ও জামাতাকে শিক্ষক বানাতে নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন !
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : নিজ মেয়ে ও জামাতাকে শিক্ষক বানাতে নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করে নজির স্থাপন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভিসি) এম আব্দুস সোবহান।
আবারও নীতিমালা শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া অস্থায়ী শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও আবারও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ফলিত গণিত বিভাগে রাবি রেজিস্ট্রার এমএ বারী স্বাক্ষরিত বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত ৪৭২তম সিন্ডিকেট সভার ৪৩ নম্বর সিদ্ধান্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রভাষক পদে নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সনাতন পদ্ধতিতে সব অনুষদ ও ইন্সটিটিউটের ক্ষেত্রে এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় যে কোনো একটিতে প্রথম বিভাগ এবং অন্যটিতে দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে।
আর গ্রেডিং পদ্ধতিতে আইন অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের ক্ষেত্রে এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় জিপি (গ্রেড পয়েন্টে) ৫.০০ স্কেলে যে কোনো একটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ এবং অন্যটিতে জিপিএ ৪.৫০ থাকতে হবে।
অথচ ওই অনুষদ অধীন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্যতা কমিয়ে একটিতে ৩.৫০ এবং অন্যটিতে ৩.২৫ শর্ত দেয়া হয়েছে; যা সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তের চেয়ে যোগ্যতা কমিয়ে আনা হয়েছে।
বিজ্ঞান অনুষদ, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ, কৃষি অনুষদ, প্রকৌশল অনুষদের ক্ষেত্রে এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় জিপি (গ্রেড পয়েন্টে) ৫.০০ স্কেলে ন্যূনতম একটি ৪.০০ এবং অন্যটিতে ৪.৫০ থাকতে হবে।
বিজ্ঞান অনুষদ অধীন ফলিত গণিত বিভাগে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান ২০০১, ২০০২, ২০০৩ সাল উল্লেখ করে গ্রেড পয়েন্ট জিপিএ ৫.০০ স্কেলে একটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ এবং অন্যটিতে ৩.২৫ থাকতে হবে।
এর আগে ২০১৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করা ভিসির কন্যা সানজানা সোবহান নিয়োগ পান হসপিটালিটি ও ট্যুরিজম বিভাগে এবং ভিসির জামাতা এটিএম শাহেদ পারভেজ নিয়োগ পান ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটে।
আগের নীতিমালা অনুযায়ী তাদের আবেদন করার যোগ্যতাই ছিল না। কারণ ভিসির মেয়ে বিভাগে মেধাক্রম ছিল ২১তম আর জামাতার মেধাক্রম ছিল ৬৭তম।
সূত্র জানায়, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে স্থায়ী ও অস্থায়ী চারজন শিক্ষক, ফলিত গণিত বিভাগে চারজন শিক্ষকসহ মোট ২০ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোলাইমান চৌধুরী বলেন, শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা বেশি থাকলে নিকটাত্মীয় অযোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষক নিয়োগ এবং টাকার বাণিজ্য করা যায় না। এছাড়াও মেয়ে-জামাতার চাকরিকে পাকাপোক্ত করতেই ওই বিভাগে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান ভিসির বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো ভাবনা নেই বললেই চলে, শুধু নিয়োগ দিতে মরিয়া তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এমএ বারী যুগান্তরকে জানান, ২০১৭ সালে রাবি শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতার পরিবর্তনের সময় এসএসসি ও এইচএসসির যোগ্যতা বেশি থাকলেও চলতি মাসেই এটা কমিয়ে আনা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে রাবি ভিসির মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।