পুত্র হত্যার বিচার দাবিতে, আমরণ অনশনে রায়হানের মা

Published: 25 October 2020

সিলেট অফিস : সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা।

মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে আজ রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে অনশনে বসেছেন তাঁরা। হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি সংবলিত স্লোগান লেখা বিভিন্ন ফেস্টুন প্রদর্শিত হচ্ছে অনশনে।

কর্মসূচি চলাকালে সাংবাদিকদের উদ্দেশে সালমা বেগম বলেন, ‘আমার বুকের ধন একমাত্র ছেলেকে কেড়ে নিয়েছে এই ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর ও তার সহযোগীরা। বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তারা। আমি এই হত্যাকারীদের বিচার চাই। আর না হয়, আমার ছেলেকে মেরেছে, আমাকেও গুলি করে মারা হোক।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকারী এসআই আকবরকে না ধরা পর্যন্ত আমি এখানেই অবস্থান করব। এই কর্মসূচি কোনো দলীয় কর্মসূচি নয়। তাই দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সালমা বেগম আরো বলেন, আমার ছেলেকে এই ফাঁড়িতে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর আজ ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। একই সঙ্গে পুলিশ হেফাজতে থাকা আকবরের সহযোগীদেরও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে না। এসআই আকবর ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।

গত ১১ অক্টোবর ভোরে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩৩) নামের এক যুবক নিহত হন বলে অভিযোগ তোলেন তাঁর স্বজনরা। নিহত ওই যুবক সিলেটের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি করে সিলেট মহানগর পুলিশ। তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়।

ওই ঘটনায় এরপর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে তিন পুলিশ সদস্যকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনার পর থেকে এসআই আকবর পলাতক।

এদিকে রায়হান হত্যার ঘটনার রাতেই নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ১৪ অক্টোবর থেকে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। পরদিন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে রায়হানের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। এর এক সপ্তাহ পর ২২ অক্টোবর প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রথম প্রতিবেদনের সামঞ্জস্য পায় ফরেনসিক মেডিক্যাল বোর্ড। অতিরিক্ত আঘাতের কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মো. শামসুল ইসলাম। কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতের জখমই তার শরীরে বেশি ছিল। তবে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি ফরেনসিক বিভাগের ওই কর্মকর্তা।

রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় ওই ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। টিটু বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। রায়হানের মৃত্যুর জন্য দায়িত্বহীনতার দায়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়া, পুলিশ সদস্য টিটুসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

এ ছাড়া গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (সাময়িক বরখাস্ত) উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি থেকে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে।