জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ মুক্তাদিরের দাফন সম্পন্ন
সিলেট অফিস : বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক, সরকারের সাবেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ঢাকাস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আবদুল মুক্তাদিরের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা ও সিলেটের বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর মরহুমের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বরইউরির উদ্দেশ্য হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
দুপুর ১ টার দিকে মৌলভীবাজার স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টার থেকে মরদেহ গ্রহণ করেন মরহুমের ভাগ্নে (ফুফাতো বোনের ছেলে) স্থানীয় সংসদ সদস্য নেছার আহমদসহ স্বজনরা। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বাদ আছর মৌলভীবাজার শহরের হজরত শাহ মোস্তফা (রহ) এর মাজার সংলগ্ন ঈদগাহে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হয়। এরপর তার চূড়ান্ত গন্তব্য সদর উপজেলার অফিসবাজার সংলগ্ন বরইউরি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। যে গ্রামে জন্ম এবং দুরস্ত শৈশব-কৈশরকাল কেটেছে তার। বাদ মাগরির সর্বশেষ নামাজে জানাজা শেষে পরিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরদিনের জন্য সমাহিত করা হয়।
সোমবার বিকাল ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঢাকায় বসবাসরত সিলেটি কমিউনিটির জ্যেষ্ঠ মুরব্বি সৈয়দ আবদুল মুক্তাদির। মৃত্যুকালে দুই ছেলেসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। অত্যন্ত সদালাপি এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আবদুল মুক্তাদিরের বেড়ে ওঠা সিলেট শহরে। ছাত্রজীবনে (৬০-এর দশকের প্রারম্ভে) সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ এমসি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে করেছেন শিক্ষকতা। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মে পদার্পণ করা সৈয়দ মুক্তাদির পরবর্তীতে পকিস্তান ট্যাক্সেশন সার্ভিসে চলে যান। স্বাধীনতা উত্তর টিএন্ডটি বোর্ডের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। নীতির প্রশ্নে আপসহীন, আজীবন সংগ্রামী মানুষটি ক্ষমতার অন্দরমহল দেখেছেন চাকরি জীবনের সূচনাতেই।
কিন্তু এসব তাকে টানেনি। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকে সমাজসেবায়। মাঝখানে কিছুদিন পরামর্শক হিসাবে কাজ করেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠানে। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও ছিলেন। তবে সমাজসেবাকে বাদ দিয়ে নয় বরং এটাই ছিল তার জীবনের ব্রত। ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, মানুষের কাজে, মানুষের মাঝে থাকতেই তিনি যেনো আনন্দ পেতেন। আমৃত্যু তা-ই করে গেছেন। জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও তিনি নিজ জেলার ঢাকাস্থ বাসিন্দাদের নিয়ে গড়া সংগঠন মৌলভীবাজার জেলা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
জালালাবাদ ভবন ট্রাস্টের সদস্য, ইএনটি ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ, ওসমানী স্মৃতি পরিষদের সভাপতিসহ বহু সামাজিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান আমলে ঢাকায় আসেন তিনি। পরবর্তীতে চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্থানে বদলি হলেও রাজধানীতেই থিতু হয়েছিলেন তিনি।
ঢাকাস্থ সিলেটের বাসিন্দাদের ঐক্যের প্রতীক সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদিরের মৃত্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনসহ বিশিষ্টজনরা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষাগুরুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীও।
তিনি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সৈয়দ মুক্তাদিরের মৃত্যুতে রীতিমতো শোক সাগরে ভাসছে জালালাবাদ এসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি ড. একে আব্দুল মুবিন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন আহমদ, জালালাবাদ ভবন ট্রাস্টের চেয়োরম্যান আব্দুল হামিদ চৌধুরী, সেক্রেটারি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, জালালাবাদ শিক্ষা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন ও সেক্রেটারি জালাল আহমদ এক যুক্ত বিবৃতিতে সৈয়দ আব্দুল মুক্তাদিরের বিদায়ে গভীর শোক প্রকাশ করেন। ব্যক্তি জীবনে সৈয়দ মুক্তাদির মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর ভাগ্নে ছিলেন।
এদিকে জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকে’র সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক জিলু।