ইংল্যান্ড জুড়ে আবারো লকডাউন
স্টাফ রিপোর্টার : আবারো পুরো ব্রিটেনে লকডাউন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্রিটিশ সরকার।
বৃহস্পতিবার থেকে এই লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। আর তা চলবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। শনিবার বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন। ব্রিটেনে এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শীতে আরো ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। মারা যেতে পারেন কমপক্ষে আরো ৮০ হাজার মানুষ। দিনে সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হতে পারেন ২০ হাজার। স্বাস্থ্য বিভাগের এমন হুঁশিয়ারিতে বরিস জনসন দ্বিতীয় লকডাউন দিলেন। সরকার এমন ভূমিকায় যাবে এটা আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। ফলে শনিবার দিনশেষে ডাউনিং স্ট্রিটে তড়িঘড়ি করে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বরিস জনসন।
সেখানেই লকডাউনের ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে তা ২রা ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ সময়ে পাব, রেস্তোরাঁ, জিম এবং অত্যাবশ্যক নয় এমন দোকানপাট চার সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে এর আগের লকডাউনের মতো না হয়ে এবার স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি খোলা রাখা যাবে। ২রা ডিসেম্বরের পরে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে কিনা তা জানানো হবে। বরিস জনসন বলেছেন, এবারের বড়দিনটি হয়তো ভিন্নভাবে পালিত হবে। এ সময়ে ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হবে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। নতুন এই লকডাউনের অধীনে লোকজনকে বাড়িতেই অবস্থান করতে হবে। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া তারা বের হতে পারবেন না। যেসব কাজ বাড়িতে বসে করা যায় না, শুধু সেসব ক্ষেত্রে বাইরে যেতে পারবেন। চিকিৎসা নিতে, খাদ্য ও অন্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটার জন্য মানুষ বাইরে যেতে পারবে। ইনডোর মিটিং বা প্রাইভেট গার্ডেন মিটিং অনুমোদিত নয়। বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকবে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা খোলা থাকবে। যদি পিতামাতা আলাদা থাকেন তাহলে বাচ্চারা তাদের আবাসন পরিবর্তন করতে পারবে।
এদিকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য বিধিনিষেধের মত মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জামাতে নামাজ কিংবা সমবেত প্রার্থনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা না গেলেও ব্যক্তিগত নামাজ পড়া যাবে, চাইল্ড কেয়ার, জরুরী সেবা যেমন রক্ত দানের জন্য খোলা রাখা যাবে। মসজিদ জানাযার জন্য খোলা রাখা যাবে। জানাযায় ৩০ জন অংশ নিতে পারবেন।
দ্বিতীয় দফায় জাতীয় লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ইংল্যান্ডের শীর্ষ ধর্মীয় নেতারা। চার্চ অব ইংল্যান্ড, ক্যাথলিক চার্চ, জুইশ, মুসলিম, হিন্দু, শিখসহ অন্যান্য ধর্মের শীর্ষ নেতাদের স্বাক্ষরিত এক যৌথ চিঠিতে দ্বিতীয় দফায় লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা বিস্তার ঠেকাতে দ্বিতীয় দফা লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বা সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার পক্ষে বিজ্ঞানসম্মত কোনো যুক্তি নেই। প্রথম দফায় লকডাউনের পর করোনা ঝুঁকিমুক্ত এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া চার্চ, সিনেগগ, মসজিদ এবং মন্দিরে সমবেত প্রার্থনা সবার অন্তরে সাহসের সঞ্চার করে এবং করোনা মহামারীতে একের অন্যের পাশে দাঁড়াতেও সহযোগিতা করে আসছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব নানান যুক্তি দেখিয়ে দ্বিতীয় দফা লকডাউনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত প্রার্থনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে আইনী লড়াইয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমবেতনা প্রার্থনার উপর দ্বিতীয় দফা লকডাউনে নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে কনজারভেটিভ পার্টি সমর্থিত ফেইথ গ্রুপ ক্রিশ্চিয়ান কর্নার আইনী লড়াইয়ে যাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন জরুরী ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পরামর্শ গ্রহণ না করার সমালোচনাও করেছে এমসিবি।