“মুজিববর্ষ সেবা সংলাপ”
সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত হাইকমিশনারের অঙ্গীকার
পোস্ট ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম এক ভার্চুয়াল সংলাপে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণীত জনগণের সেবক হিসেবে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী কমিউনিটিকে সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানে তাঁর ও হাই কমিশনের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডনে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ব্যতিক্রমধর্মী এই অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার কনস্যুলার, বাণিজ্যিক, কল্যাণ ও কোভিড দুর্যোগকালীন মানবিক সেবাসহ বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন এবং তাঁদের সাথে অত্যন্ত খোলামেলা ও আন্তরিক পরিবেশে মতবিনিময় করেন।
গত বুধবার হাই কমিশনে আয়োজিত এই ভার্চুয়্যাল সংলাপে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী ব্রিটিশ-বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ তরুণ প্রজন্মের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী অংশগ্রহণ করেন। তারা গত দুই বছরে লন্ডন মিশনের কনস্যুলার সেবাসহ অন্যান্য সেবার মানের দৃশ্যমান উন্নতির প্রশংসা করে বলেন, হাই কমিশন বিগত দুই বছরে অনেক বেশি সক্রিয় ও জনমুখী হয়েছে, কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ অনেক বেড়েছে এবং দূরত্ব কমেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানা গেছে।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদ জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ৪ নভেম্বরও স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি বিশেষ দিন। ১৯৭২ সালের এদিনে বঙ্গবন্ধু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনসেবামুখী সংবিধান স্বাক্ষর করে নিঃশর্ত সেবা প্রদানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একটি দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতির পিতার একটি বিখ্যাত উদ্বৃতি উল্লেখ করেন, ‘‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জনগণের সাথে মিশে যেতে হবে। তারা জনগণের খাদেম, সেবক, ভাই। তারা জনগণের বাপ, জনগণের ভাই, জনগণের সন্তান। তাদের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।”
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, “আমরা জনগণের সেবক, জনগণের শাসক নই। জনসেবার জন্য জনপ্রশাসন।”
বিগত দুই বছরে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে হাইকমিশনার বলেন, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে হাইকমিশন ৩৫% বেশী পাসপোর্ট এবং ১০% বেশী এনভিআর ও জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করেছে। একই সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করেছে। চলতি বছর মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত হাই কমিশন লকডাউনের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাসপোর্ট, এনভিআর ও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে লকডাউন চলার সময়ও হাই কমিশন প্রতিটি উইং খোলা রেখে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে সব ধরনের সেবা চালু রেখেছে। গত সাত মাসে ২৪/৭ দুইটি মোবাইল হেলপ লাইনে একুশ হাজার টেলিফোন কল রিসিভ করা হয়েছে। কোভিডের আগে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে ১৪ বার আঞ্চলিক কনস্যুলার সার্জারীর মাধ্যমে হাই কমিশন তার সেবা প্রবাসীদের দোরগড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। ২০১৮ সালে এই ধরনের আঞ্চলিক সেবা প্রদানের সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি।
হাইকমিশনার বলেন, তাঁর বিশেষ উদ্যোগে হাই কমিশনে একটি ডেডিকেটেড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ডেস্ক খোলা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রবাসী দ্বৈত নাগরিকদের বাংলাদেশে পারিবারিক সমস্যা ও সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সহায়তাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে নাম অর্ন্তভূক্তি ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বিগত দুই বছরে এ ধরনের দুইশত এর বেশী সহায়তা প্রদান করার ক্ষেত্রে হাই কমিশন বাংলাদেশে ৭৫০টি অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিঠি পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, দ্রুত সেবা প্রদানের জন্য কোভিডের আগে হাই কমিশনের কনস্যুলার উইংয়ে ইলেক্ট্রনিক টোকেন পদ্ধতি ও একাধিক সার্ভিস ডেস্ক চালুসহ অভ্যর্থনা কক্ষে ফটোকপি, কম্পিউটার ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি তোলার মেশিন বসানো হয়েছিল। কোভিডের কারণে সেবা গ্রহিতারা এখন এসব সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না। তবে বয়স্ক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সার্ভিস দেয়া অব্যাহত রয়েছে। যারা হাই কমিশনে আসতে পারছেন না এমন অসুস্থ্য ও অক্ষম ব্যক্তিদের বাড়ীতে গিয়ে হাই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সেবা দিচ্ছেন।
হাইকমিশনার বিশেষভাবে উল্লেখ করেন বর্তমানে কনস্যুলার সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সব ধরনের ফি ক্রেডিট কার্ড, ডেভিড কার্ড ও পোস্টাল অর্ডারে নেয়া হচ্ছে বিধায় হাই কমিশনে নগদ লেনদেনের কোন সুযোগ নেই। তিনি উল্লেখ করেন বিগত দুই বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় হাই কমিশনের সেবার গুগল রেটিং আগের ১.৮ থেকে বর্তমানে ৩.৬-এ উন্নীত হয়েছে।
হাইকমিশনার বলেন, কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকায় বর্তমানে সেবা গ্রহিতাদের এ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়ার সংখ্যা কমানো হয়েছে, যাতে তারা হাই কমিশন থেকে নিরাপদে সেবা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু প্রতিদিনই যতসংখ্যক সেবা গ্রহিতা এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসছেন প্রায় সমপরিমাণ এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া আসছেন। এদের প্রত্যেককেই হাই কমিশন সেবা দিচ্ছে। এছাড়া কনস্যুলার হেলপ লাইন ও কোভিড জরুরী হেলপ লাইন চালু করে সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা জরুরী সেবা এবং কোভিড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্যানেল গঠন করে যারা এনএইচএস থেকে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না হাই কমিশন তাদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। যুক্তরাজ্যে প্রথম লকডাউনের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হাই কমিশন দুইটি বিশেষ প্রত্যাবসন বিমানের মাধ্যমে প্রায় তিনশত আটকেপড়া বাংলাদেশীদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডন ‘‘মুজিববর্ষ কনস্যুলার সেবা সপ্তাহ” পালনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো তা কোভিড-এর কারণে স্থগিত রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এ সেবা সপ্তাহ পালন করা হবে।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাডি সার্কেলের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, কাউন্সিলর পারভেজ আহম্মদ, গ্রেটার সিলেট ডেভেলাপমেন্ট ও ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এম, এ মুনিম, কমনওয়েল্থ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী, ইউকে বিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট নাজমুল ইসলাম নুরু, ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মাহতাব মিয়া, চেতনায় বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মিনা বড়ুয়া, আয়ারল্যন্ডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খন্দকার রিয়াজ উদ্দিন, সাংবাদিক তানভীর আহমেদ, তরুণ উদ্যোক্তা হারুন দানিশ ও নিয়মিত সেবা গ্রহনকারী তোফায়েল খসরু মিয়া।