সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা
বিশেষ সংবাদদাতা : সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় চিরকুট লিখে পকেটে রেখে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বেলাল হোসেন পলাশ নামে এক যুবক।
শনিবার ভোরে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের নলীবাজারের বাসার পেছনে মেহগনি গাছে ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। পলাশের জামার পকেটে চিরকুটে লেখা- ‘সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করলাম।’
নিহত পলাশ সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া গ্রামের শাহজাহানের ছেলে। পলাশ নলীবাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন।
পলাশের স্ত্রী রোকসানা বেগম বলেন, ২০১৫ সালে বরগুনার পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সৌরভের কাছ থেকে প্রথমে তিন লাখ টাকা সুদে গ্রহণ করেন তার স্বামী পলাশ। এরপর পর্যায়ক্রমে এভাবে তিনি ওই চিকিৎসকের কাছ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা সুদে নেন। তিনি ওই টাকার সুদ বাবদ ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আসল টাকা ও মাসিক ২৬ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দেন সৌরভ। বুধবার সৌরভকে ওই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করায় বৃহস্পতিবার পলাশকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ওই সুদ ব্যবসায়ী সৌরভ।
একপর্যায়ে কাকুতি-মিনতি করে শনিবার পর্যন্ত সময় নেন পলাশ। শনিবার ফজরের নামাজের পর সৌরভ টাকা চেয়ে পলাশকে ফোন দিয়ে আবার গালিগালাজ করে।
অপমানে লজ্জায় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পলাশ কাউকে না জানিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সাড়ে ৭টার দিকে আবারও পলাশের মুঠোফোনে কল দিয়ে টাকা চায় সুদ ব্যবসায়ী সৌরভ।
আমি ফোন রিসিভ করে সৌরভকে জানাই, পলাশ আত্মহত্যা করেছে। তারপরও সে টাকা চায়। ফোনে সৌরভ জানিয়ে দেয়- আজকেই তার টাকা দিতে হবে।
আমি এই সুদ ব্যবসায়ী সৌরভের বিচার চাই, আমার ছোট ছোট দুটো বাচ্চা নিয়ে এখন আমি কোথায় যাব?
এ ঘটনার পর ফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছে পল্লী চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম সৌরভ। বরগুনার ফার্মেসিপট্টিতে তার চেম্বারে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পলাশের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ সময় মৃত পলাশের জামার পকেট থেকে চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। এতে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় অপমানে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন মর্মে লিখে রাখেন।
বরগুনা সদর থানা ওসি শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।