ইতালি যেন এক মৃত্যুপুরী!

Published: 8 November 2020

পোস্ট ডেস্ক : পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশ ইতালি।

প্রতিদিন প্রায় ছয় কোটিরও বেশি নাগরিক, দুই লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিসহ লাখো ভ্রমণপিপাসুদের কলকাকলিতে মুখরিত হয় ইতালির বিভিন্ন শহর। তবে করোনার কারণে চিরচেনা এসব নগরী এখন অচেনা এক শহরে পরিণত হয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মহামারি করোনার আগ্রাসনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল দেশটি। তবে প্রথম ধাক্কা সামলে স্বাভাবিক হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

ফের করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। শহরের রাস্তাগুলোতে সারি সারি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও লাশের কফিন বহনকারী গাড়ি। অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দে নিস্তব্ধ তুরিনো ও বেরগেমো শহর।

ইতালির হাসপাতালগুলোতে প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভবিষ্যতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে তারা আশা করছেন, ইতালি আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। আগামী মার্চ থেকেই মাত্র ২ ইউরোতে পাওয়া যাবে করোনা ভ্যাকসিন।

দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। ইতালিতে প্রায় ২ লাখেরও বেশি বাংলাদেশির বসবাস। করোনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২০ জন বাংলাদেশি আর আক্রান্ত অনেকেই। করোনা বিপর্যস্ততে চাকরি হারিয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। করোনার প্রথম ধাপের ধাক্কায় ইতালি স্বাভাবিক হলেও ফের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আশংকায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

দ্বিতীয় ধাপে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গত বুধবার রাতে নতুন করে লকডাউনের অধ্যাদেশ জারি করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে। শুক্রবার ( ৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া লকডাউন চলবে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে পুরো ইতালিতে রাত ১০ থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ-ই থাকবে জানিয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ।

জানা গেছে, লম্বারদিয়া, পিউমন্তে, আলতো আদিজে, ভালে দি আওস্তা এবং কালাব্রেইয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে আপাতত ১৫ দিনের জন্য লকডাউন দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া হবে।

করোনা প্রতিরোধে ইতালি সরকারের নতুন এই অধ্যাদেশ এলাকাভেদে কমলা, হলুদ এবং সবুজ তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ইতালির লম্বারদিয়া অঞ্চলে আক্রান্ত সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকায় এটি রেড জোনের মধ্যে রয়েছে।

তবে, লাল চিহ্নিত অঞ্চলে সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে। এই সব লাল অঞ্চলে ফার্মেসি, সেলুন, খাবারের দোকান, ফ্যাক্টরি ছাড়াও বার, রেস্টুরেন্টসহ সবকিছু বন্ধ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, শনিবার (৭ নভেম্বর) দেশটিতে করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ৩৯ হাজার ৮১১ জন। এইদিনে মৃতের সংখ্যা ৪২৫ জন । সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ হাজার ৯৬৬ জন। এই নিয়ে ইতালিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২ হাজার ৪৯০ জন ও মৃতের সংখ্যা ৪১ হাজার ৬৩ জন।

ইতালির মিলান শহরের কবরস্থানগুলোতে দাফনের জায়গা না থাকায় পাশের শহরে বারগেমোতে সারি সারি অ্যাম্বুল্যান্সে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সৎকারের জন্য। ইতালির শহরগুলোতে শুধু অ্যাম্বুলেন্স আর সাইরেনের শব্দ। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। আবারও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে এ যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে।