কে বসছেন আল্লামা শফির চেয়ারে?
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : ঐতিহ্যবাহী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা।
দীর্ঘদিন মাদ্রাসাটির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন প্রয়াত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি। এবার নানা আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে আল্লামা শফির উত্তরসূরি নির্ধারণে এই মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় সম্মেলন ডেকেছে ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ বলে দাবি করা হেফাজত।
আগামী রোববার সকাল ১০টা থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে হেফাজতের সম্মেলনে অনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন হেফাজতের বর্তমান সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
তিনি আরও জানান, হেফাজতের প্রায় সাড়ে ৩০০ জন কেন্দ্রীয় শীর্ষ মুরুব্বিরাই ঠিক করবেন কে হবেন প্রয়াত আল্লামা আহমদ শফির উত্তরসূরি। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে হেফাজত নেতাকর্মীদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
হেফাজত সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতের আমির আহমদ শফির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সংগঠনটির আমিরের পদ শূন্য হয়। আগামী রোববারের সম্মেলনে নতুন আমির নির্বাচনের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন হেফাজতের একাধিক নেতা। এক্ষেত্রে হেফাজতের নতুন আমির হিসেবে সবার গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই বলে বর্তমান মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম বিবেচনার শীর্ষে রয়েছে।
এ ছাড়া সংগঠনটির মহাসচিব পদে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য মাওলানা শেখ আহমদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারুল আহকাম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকার জামিয়া রহামানিয়া আরাবিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মামুনুল হকের নাম আলোচনায় রয়েছে বলে হেফাজতের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন। তবে মহাসচিব পদে আলোচনায় থাকা কয়েকজনের রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় শেষ দৌঁড়ে তারা টিকতে পারবেন না বলে অনেকের ধারণা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কেন্দ্রীয় হেফাজত নেতা জানান, সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ ও কওমিপন্থীদের মাঝে এখন আলোচনার বিষয়- কে হচ্ছেন প্রয়াত আল্লামা শফির উত্তরসূরি? কারা আসছেন এ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে, সেদিকেই এখন তাদের দৃষ্টি। হেফাজত আমির ও মহাসচিব পদে সবার গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই এমন কাউকে নির্বাচিত করার দাবি তাদের।
তারা মনে করেন, সব বির্তকের ঊর্ধ্বে থাকবেন- এমন ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে হবে যারা কওমি অঙ্গনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে যাবেন। এ ছাড়া সারা দেশে বিস্তৃত এবং আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত সংগঠনের মূল নেতৃত্বে অভিজ্ঞ, দূরদর্শী এবং নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের আসা উচিত। তবে তাড়াহুড়ো না করে একটু ধীরে-স্থিরে এগোনো প্রয়োজন আছে বলেও তারা মনে করেন।
এদিকে, আগামী রোববারের হেফাজতের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন উপলক্ষে সারা দেশ থেকে কওমি অঙ্গের শীর্ষ আলেমরা কাউন্সিলে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে জানান হেফাজতের হাটাহাজরী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী। তিনি জানান, হেফাজতের প্রায় সাড়ে ৩০০ জন কেন্দ্রীয় শীর্ষ মুরুব্বিরাই ঠিক করবেন প্রয়াত আল্লামা শফির স্থলাভিষিক্ত কে হবেন। ইতিমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে তাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পযার্য়ে।
অন্যদিকে, সংগঠনটির শুরুর দিকে নানা কারণে সরে দাঁড়ানো কওমি অঙ্গনের শীর্ষ বেশ কয়েকজন আলেম ফের যুক্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে পটিয়া আল-জামেয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া মাদ্রাসার আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি আরশাদ রহমানি হাফিজাহুল্লাহ ও চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফ মাদ্রাসার পরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভী অন্যতম।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক অরাজনৈতিক কওমি আক্বীদাভিত্তিক ইসলামী সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ। সেই সম্মেলনে প্রয়াত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির মনোনীত হন। পরবর্তীতে নবী ও রাসুলের (সা.) অবমাননা, নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও ২০১৩ সালে ৫ মে ১৩ দফা দাবিতে রাজধানীর শাপলা চত্ত্বর অবরোধের মাধ্যমে সংগঠনটি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।