নীরব ট্রাম্প কন্যা ইভানকা, জামাই জারেড কুশনার?
পোস্ট ডেস্ক : পরাজয় স্বীকার করতে রাজি নন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জো বাইডেন।
কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে আইনি লড়াইয়ের পথে গেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা। এমনকি এই প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছেন এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সহ ট্রাম্পের বেশির ভাগ সমর্থক। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে সরব ট্রাম্পের দুই ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও এরিক। কিন্তু একেবারে নীরব ট্রাম্পের কন্যা ইভানকা ট্রাম্প ও তার স্বামী জারেড কুশনার। মিডিয়ায় চাউর হয়েছে যে, তারা চাইছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরাজয় মেনে নিন। ওদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের জুনিয়র কর্মকর্তারা চাকরি হারানোর আতঙ্কে আছেন।
তাদের কেউ কেউ বাইরে চাকরি খুঁজছেন এটা প্রকাশ পেলে তাদের বরখাস্ত করা হতে পারে। এসব জানিয়ে অনলাইন বিবিসিতে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউজের দৌড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জো বাইডেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এমনকি পরাজয় স্বীকার করে নেয়ার মতো কোনো লক্ষণই তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। পক্ষান্তরে, তিনি অপ্রমাণিত অভিযোগ উত্থাপন করছেন ভোটে ব্যাপক জালিয়াতির। তার হিসাব হলো বেশ কয়েকটি রাজ্যে লাখ লাখ ভোটে কারচুপি করা হয়েছে। এসব ভোটের ফল উল্টে দেয়া হয়েছে। তা নাহলে তিনি জয়ী হতেন। অনেকেই তার এ দাবিকে পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন। তার এমন অবস্থান রাজনৈতিক আদর্শ ও প্রচলিত রীতির দিক দিয়ে পুরো জাতির মধ্যে এক ঝাঁকুনি সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সকরারি কর্মকর্তা ও ভোটাররা তাদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। ফলে সামনে এক অনিশ্চয়তা অপেক্ষা করছে।
সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা রিপাবলিকান মিশ ম্যাককলেন বলেছেন, যেকোনো রকম অভিযোগ করার অধিকার আছে প্রেসিডেন্টের এবং আইনের অধীনে ভোট পুনর্গণনা করার অধিকার আছে। তবে গত চার বছরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে বিষয়ে কৌশলী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক রিপাবলিকান রাজনীতিক। এর মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাও। আবার তাদের কেউ নিজেদের কণ্ঠকে চেপে ধরেছিলেন এবং অপেক্ষা করছিলেন বিপদ কেটে যাওয়ার জন্য। তাদের হিসাব খুবই সাধারণ। খুব কম রিপাবলিকানই এমন একজন মানুষের ক্রোধের কারণ হতে চান, যিনি টুইটারে আঙ্গুলের টোকা দিয়েই সব তছনছ করে দিতে পারেন। তাই নির্বাচনে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও রিপাবলিকানরা তার পাশে অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্টকে তারা ‘বৈধ ভোটে’ জেতানোর চেষ্টা করছেন। রিপাবলিকান রাজনীতিকরা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছেন।
এখন এই খেলাটির নাম হলো ধৈর্য্যধারণ। সবাই ধরেই নিয়েছেন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ করার অধিকার আছে। তার হতাশা কাটিয়ে উঠার জন্য সময় প্রয়োজন। কিন্তু যেসব তথ্যপ্রমাণ উঠে আসছে তাতে নির্বাচনের ফল পাল্টে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যেভাবেই হোক জানুয়ারির মধ্যেই মার্কিনিরা নতুন একজন প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও সোমবার এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার তার সিনিয়র স্টাফদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচনে জালিয়াতি তদন্ত করতে। আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে শুরু করতে বলা হয়েছে। তিনি রাজ্যগুলো থেকে আসা নির্বাচনের ফল স্বীকার না করে এই পথে নিয়েছেন। এসব পদক্ষেপ বলে দেয়, বহু রাজ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হেরে গেছেন। সেখানে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং তাতে তিনি হেরে গেছেন এমনটা নিশ্চিত করতে চান ট্রাম্প। এটর্নি জেনারেল এতে অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তাতে ট্রাম্প এবং তার সমর্থকরা স্বস্তি পাবেন। কারণ, তারা মনে করেন নির্বাচনের ফল চুরি করা হয়েছে। তবে কিছু রিপাবলিকান প্রার্থী মনে করেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু ফল এসেছে। ফৌজদারি অপরাধ তদন্তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিষেধাজ্ঞা আছে, বিশেষ করে নির্বাচনকে ঘিরে। কিন্তু উইলিয়াম বার এখন সেসব সেফগার্ডের অনেকটাই পাশে সরিয়ে রাখছেন। এর মাধ্যমে কি তিনি ভোট জালিয়াতির কঠিন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবেন?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে রুডি গিলিয়ানির মতো দীর্ঘদিনের সহযোগিরাও একই পথে হাঁটছেন। এর কারণ খুবই প্রাকটিক্যাল। প্রেসিডেন্ট যদি পদ ছেড়ে দেন তাহলে তারা চাকরি হারাবেন। প্রেস সেক্রেটারি কেলি ম্যাকইনানি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও-ও একই পথে রয়েছেন। এরই মধ্যে মাইক পম্পেও ঘোষণা দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা শুরু হবে মসৃণ পথে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বড় ছেলে ডনাল্ড জুনিয়র এবং এরিক ট্রাম্প জোরালোভাবে তার পিতার পক্ষ নিয়েছেন। তারাও নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ধরেছেন। তবে নির্বাচনের পর থেকে নীরব রয়েছেন প্রেসিডেন্টকন্যা ইভানকা ট্রাম্প। মিডিয়ায় রিপোর্ট আছে যে, তিনি এবং তার স্বামী জারেড কুশনার মনে করছেন, এখনই সময় প্রেসিডেন্টের পরাজয় মেনে নেয়ার। ট্রাম্পের প্রশাসনিক অনেক জুনিয়র সদস্যরা রয়েছেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায়। কয়েক মাসের মধ্যেই তারা কাজ হারাতে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ চাকরির সন্ধান করছেন এমনটা যদি প্রকাশ পায় তাহলে তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হতে পারে। তাই তাদের অনেকেই ভোট জালিয়াতির সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন।
গত সপ্তাহের নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের অনেক সমর্থক আশ্বস্ত ছিলেন যে, জনমত জরিপ যা-ই হোক, তাদের নেতা ট্রাম্প বিজয়ী হবেন। এক্ষেত্রে তারা ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিস্ময়কর ফলের কথা মাথায় রেখেছিলেন। ওই নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে বিজয়ী হন ট্রাম্প। ফলে তাদের অব্যাহত আস্থা ভুল প্রমাণ হতে পারে না- এমনটিই তারা মনে করছিলেন। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা ভুল প্রমাণ হয়েছে। ২০২০ এর নির্বাচনের ফল খুব বেশি কাছাকাছি ছিল। যদিও ভোট গণনা করা হয়েছে এবং নির্বাচনে বাইডেনকে জয়ী বলা হচ্ছে, তবু কিছু রক্ষণশীল এখনও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আঁঠার মতো লেগে আছেন। এরই মধ্যে রয়টার্স/ইপোস একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকানদের শতকরা ৪০ ভাগ মনে করেন নির্বাচনে বিজয়ী হননি বাইডেন। তবে সর্বসাধারণ্যে এই হার শতকরা ২১ ভাগ। ট্রাম্প শিবির ওয়াশিংটন ডিসি সহ শনিবার সারাদেশে ‘স্টপ দ্য স্টিল’ বা ভোট চুরি বন্ধ কর র্যালি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আরো রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনী প্রচারণা স্টাইলে র্যালি করার কথা বিবেচনা করছেন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেয়া হয় নি।
এ পর্যায়ে বিবিসির রিপোর্টে প্রশ্ন করা হয়, ট্রাম্পের কি পরাজয় মেনে নেয়া উচিত? এর উত্তর তারাই দিয়েছে এবং বলেছে- হ্যাঁ। এবারের নির্বাচনে শনিবার যখন জো বাইডেন বিজয়ী হচ্ছেন বলে প্রক্ষেপনে বলা হয় , তখন জো বাইডেন এবং তার অন্তর্বর্তী টিম কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে তারা কাজ শুরু করে দেয়। সোমবার তিনি তার করোনাভাইরাস বিষয়ক টাস্কফোর্সের সঙ্গে মিটিং করেছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রশ্ন নিয়েছেন এবং আগামী কয়েক সপ্তাহে তার প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরাজয় স্বীকার করে না নেয়া তার কাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এ নিয়ে বাইডেন উদ্বিগ্ন এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে স্বাভাবিকভাবে তহবিল দেয়া হয়। সরকারি তথ্য জানানো হয়। তাতে বিলম্ব করা হলেও তার কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তার বিজয়কে মেনে নিতে এগিয়ে আসবেন রিপাবলিকানরা। তার কথায় এখন যদিও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের ভয়ে তারা এগিয়ে আসছেন না, তবে ঠিকই এক সময় তারা সমর্থন দেবেন।
বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়ায় নানা রকম অভিযোগ করে যাচ্ছেন। তার সেই বক্তব্যের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে জো বাইডেন ও ডেমোক্রেটদের। বিবিসি লিখেছে, কেন বাইডেনের কাছে এখনও পরাজয় স্বীকার করেন নি তা শুধু ডনাল্ড ট্রাম্পই জানেন। তিনি বহু রাজ্যে লাখ লাখ ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। তিনি মনে করছেন ব্যাপক হারে ভোটে জালিয়াতির বিষয়টি আদালতে প্রমাণ হবে এবং সুইং স্টেটগুলোতে ভোটের ফল নিয়ে তার পক্ষে রায় আসবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তার পরাজয় ঢাকতে নিজে শুধুই পানি ঘোলা করছেন।