ক্লান্ত রওশন এরশাদ বসে পড়লেন সংসদে
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : রোববার জাতীয় সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদে বক্তব্য রাখছিলেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক বেগম রওশন এরশাদ এমপি।
বক্তব্য দেয়ার মাঝে তিনি শরীরে ক্লান্তি অনুভব করেন। এক পর্যায়ে বসে পড়েন।
এর আগে যখন তাকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন ফ্লোর দিচ্ছিলেন তখন তিনি বলছিলেন, ‘বসে বলব নাকি?’
স্পিকার তাকে বসে বলার অনুমতি দেন।
পরে তিনি নিজেই বলেন, ‘আচ্ছা, এখন দাঁড়িয়ে বলি, তারপর বসে বলব’। এরপর তিনি বক্তব্য শুরু করেন। ৫ মিনিট বক্তব্য দেয়ার পর তিনি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না।
স্পিকারের অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে বাকি ১৩ মিনিটের বক্তব্য তিনি বসেই দেন।
সংসদে দেয়া বক্তৃতায় রওশন এরশাদ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়ে গেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ উপহার স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই বঙ্গবন্ধুকে যারা ইতিহাস থেকে মুছতে চেয়েছিলেন তারাই এখন ইতিহাস থেকে মুছে গেছেন। এখন সোনার বাংলাকে তার আদর্শের আলোকে গড়ে তুলতে হবে প্রিয় বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই আলোচনায় রওশন এরশাদ আরও বলেন, এই দেশের গণমানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর সীমাহীন ত্যাগ-তিতীক্ষা রয়েছে। তিনিই আমাদের অন্ধকারের মধ্যে আলো দেখিয়েছেন। এখন তার দেখানো আলোতেই, আমরা পথে হাঁটছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু, রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মকাণ্ড চলছে।
বক্তব্যের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বেগম রওশন এরশাদ। সেটা ছিলো ১৯৭৪ সালের শেষ দিকের। তিনি বলেন, এই মহামানবের সঙ্গে একই প্লেনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থাকা কর্নেল জামিল এসে আমাকে বলেন, ভাবি বঙ্গবন্ধু আপনাকে ডাকছেন। আমি বলি যাবো না? কর্নেল জামিল পুনরায় যেতে বললে, বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলাম। বঙ্গবন্ধু তখন শুয়েছিলেন। আমাকে দেখে উঠে বসতে গেলে বললাম, আপনি উঠবেন না। শুয়ে থাকেন, আমি আপনার মাথার কাছে বসছি। তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। তিনি আমার মা-বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। আমার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। আমাকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করলেন। সেদিন দেখা না হলেও অনেক কিছুই অজানা থাকতো।
বঙ্গবন্ধু নানান সাহসী বক্তব্য তুলে ধরে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি যদি কখনো পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সুযোগ পাই তাহলে সেই শাসনতন্ত্রে এই প্রদেশের নাম হবে বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি।
রওশন এরশাদ তার বক্তৃতায় আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার অনুভূতি ছিল অত্যন্ত গভীর। তার এই গভীর অনুভূতি দেখে আশ্চার্য হয়ে যেতাম। গরীব-দুঃখী মেহনতি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য তিনি আজীবন লড়াই করেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে হারানো কষ্টের কথা তুলে ধরে রওশন এরশাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা না করলে তাহলে শতায়ু হতেন হয়তো। তাইতো কেবলই বিখ্যাত একটি গান মনে হয়, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই…. আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা, বিশ্ব পেতো ফিরে এক মহান নেতা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গেলে আমার কান্না চলে আসে।বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্খা থেকে অনেক দূরে। তবে আশার কথা, তার যে রাজনৈতিক দর্শন তার প্রতিফলন দেখতে পাই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী দিনরাত প্রায় ২৪ ঘন্টা কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সফলতা কামনা করি।