ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ
সেই মজনুর যাবজ্জীবন
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি মজনুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোসাম্মৎ কামরুন্নাহারের আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মাত্র ১৩ কর্মদিবসে আলোচিত মামলার কার্যক্রম শেষ করে এই রায় ঘোষণা করা হলো।
এর আগে সকাল ৮টার দিকে আসামি মজনুকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তাকে কারাগারের গারদে রাখা হয়। এরপর বেলা আড়াইটায় তাকে আদালতের এজলাসে তোলা হলে বিচারক তার উপস্থিতিতে রায় পড়া শুরু করেন। বেলা ৩টা ১০ মিনিটে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
গত ১২ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুনানি শেষে আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। গত ২৬ আগস্ট এ মামলায় মজনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ভার্চ্যুয়াল আদালত। এর মধ্যে দিয়ে আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী ও ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী বাবা আদালতে প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। পরের দিন গত ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলার ভুক্তভোগী আসামি মজনুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন এবং মজনুকে ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ নিয়ে মামলাটিতে মোট ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এ দিন ধার্য করেন আদালত। তারও আগে গত ১৬ মার্চ মজনুকে একমাত্র আসামি করে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবু সিদ্দিক। ওইদিনই আদালত মামলাটি পরবর্তী বিচারের জন্য নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন।
গত ৫ জানুয়ারি ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। পরে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরপর গত ৮ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ধর্ষণের ঘটনায় মজনুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ৯ জানুয়ারি আদালত মজনুর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৬ জানুয়ারি মজনু দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ৫ জানুয়ারি ওই ছাত্রী বান্ধবীর দাওয়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে করে তাঁর বান্ধবীর বাসা শেওড়ার উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যা ৭টায় শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে না নেমে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যান তিনি। ওইসময় ছাত্রী বুঝতে পারেন, তিনি ভুল করে নেমে পড়েছেন। ভুল বুঝতে পেরে তিনি ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকেন। এরপর মজনু পেছন থেকে হঠাৎ তাঁকে পাশের কাটা ঝোপের ভেতরে ফেলে দেন। তখন ওই ছাত্রী চিৎকার করতে থাকলে মজনু গলা চেপে ধরেন এবং মুখে, বুকে ও পেটে কিল ঘুষি মারেন। এরপর ওই ছাত্রী নিস্তেজ হয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন মজনু তাঁকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পরে মজনু ছাত্রীর ব্যাগ থেকে একটি প্যান্ট বের করে তাঁকে পরিয়ে দেন। ছাত্রীর জ্ঞান ফেরার পরে দেখেন তাঁর পরনে যে প্যান্ট ছিল সেটা আর নেই। ছাত্রী তখন চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে মজনু টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের জন্য গলা চেপে ধরে এবং কিল ঘুষি মারে। এরপরে ছাত্রীর মুখ ও গলায় ফোলা ও কাঁটা ছেড়া জখম করে।
একপর্যায়ে মজনু দুই হাজার টাকা, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ ছাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন। এরপর ছাত্রী দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে একটি রিকশায় ওঠেন এবং তাঁর বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে বিষয়টি জানালে ছাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।