ফেনি ও নাটোরে আদালত চত্বরে বিয়ে অত:পর ধর্ষকের জামিন
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : নাটোরে একটি ধর্ষণ মামলায় আদালত চত্বরে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার তরুণীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরই ধর্ষকের জামিন মঞ্জুর করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত চত্বরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মকিমপুর মাঠে ছাগল চড়াতে গিয়ে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় রওশনপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে মানিকের সঙ্গে। সেখানে পরিচয়ের পাশাপাশি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে মানিক।
পরবর্তীতে মানিক হোসেন গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে কথাবার্তা বলতে থাকে। একপর্যায়ে ওই তরুণীর অনিচ্ছায় মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় নগ্নভিডিও ধারণ করে মানিক। বিষয়টি বুঝতে পেরে বিয়ের জন্য মেয়েটি চাপ দিলে কাজী ডেকে আনার কথা বলে মানিক পালিয়ে যায়। পরে নগ্নভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় সে।
এ ঘটনায় ১৯ অক্টোবর ওই তরুণী বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই মানিক হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির দিনে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম ধর্ষক মানিক হোসেনের জামিন আবেদনের পাশাপাশি উভয় পরিবার বিয়ে দেয়ার জন্য সম্মতি প্রকাশ করেছে বলে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেন।
পরে নাটোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবদুর রহমান সরদার ওই তরুণীর সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ধর্ষক মানিক হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে আদালতপাড়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ সময় আদালতে বাদী এবং আসামিপক্ষের আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আসামিপক্ষের আইনজীবী মঞ্জুরুল আলম বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
তিনি জানান, ধর্ষণের ঘটনায় গুরুদাসপুর থানায় মানিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই তরুণী। পুলিশ মানিককে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। আদালত প্রথমে ওই যুবকের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে বাদী ও আসামির পরিবার সমঝোতা করে দুজনের বিয়ের বিষয়ে একমত হয়।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার মানিককে কারাগার থেকে আদালতে আনা হলে দুপুরে তাদের বিয়ে হয়। সাড়ে চার লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে আদালত চত্বরেই কাজী রিয়াজুল হক তাদের বিয়ের নিবন্ধন করেন। বিয়ের বিষয়টি আদালতকে অবগত করলে মানিকের জামিন মঞ্জুর করা হয়।
ফেনি : ধর্ষণ মামলায় উচ্চ আদালতের জামিনের আশ্বাসে ফেনী জেলা কারাগারের সামনে বিয়ে হয় ফেনীর সোনাগাজীর বাসিন্দা জিয়াউল হক জিয়া ও তার প্রেমিকার। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ফেনী জেলা কারাগারের সামনে জাঁকজমক আয়োজনে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বর-কনেসহ দুইপক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১ নভেম্বর বিয়ে করার শর্তে ধর্ষণ মামলার আসামিকে জামিন দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে দুইপক্ষের লোকজন মিষ্টি নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে আসেন। পরে জিয়া ও ভুক্তভোগীর আইনজীবীরা সেখানে আসেন। বিয়ে পড়াতে আসেন জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামানসহ কাজী আবদুর রহিম। ছয় লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান ও জেলার শাহদাত হোসেন বলেন, ১ নভেম্বর বিয়ে করার শর্তে প্রেমিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় কারাবন্দি জিয়াউল হক জিয়াকে জামিন দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন হাইকোর্ট। সেই লক্ষ্যে ওই তরুণীর সঙ্গে জিয়ার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা হয়েছে ছয় লাখ টাকা।
এ বিয়েতে জিয়া খুশি বলে জানিয়েছেন। তবে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। এমনকি দুই পরিবারও বিয়ে নিয়ে খুশি বলে জানা গেছে।
গত ২৭ মে জেলার সোনাগাজীর চরদরবেশ এলাকার এক তরুণীকে ধর্ষণ করেন তার প্রেমিক জিয়াউল হক জিয়া। তার বাবা বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। ঘটনার দিনই ভুক্তভোগী জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। গত ২৯ মে জিয়াকে গ্রেফতার করে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ।
জামিনে মুক্ত হয়ে ভুক্তভোগীকে জিয়া বিয়ে করবেন- তার পরিবার এ আবেদনপূর্বক আদালতের কাছে জামিন চেয়ে আপিল করে। পরে হাইকোর্ট জিয়ার জামিন না দিয়ে কারাফটকেই ভুক্তভোগীর সঙ্গে তার বিয়ের আয়োজনের জন্য ফেনী কারাগারের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় জিয়া ও তার প্রেমিকার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।