ইয়াসমিনের করুণ আর্তি… আমার অনেক জ্বলতেছে স্যার…!’
পোস্ট ডেস্ক : ‘আমার জ্বলতেছে, অনেক জ্বলতেছে…।
সহ্য করতে পারতেছি না। অনেক বলছি, তুমি এমন কাজ করিও না। আমার অনেক কষ্ট হইতেছে, আমি কিছু করব না, তুমি এটা করিও না…আমার প্রচুর জ্বলতেছে.. সে বলে “তোরে মেরেই ফেলব, তুই মরে যা….!” এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন হাসপাতালের বেডে শুয়ে মরণ যন্ত্রণায় কাতরানো গৃহবধু ইয়াসমিন। যৌতুকের দাবিতে পাষণ্ড স্বামী যার নিম্নাঙ্গ পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে! তারপর চামড়া টেনে তুলেছে!
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি আনোয়ার হোসেন (শামীম আনোয়ার) গৃহবধু ইয়াসমিনের একটি ভিডিও সোশ্যাল সাইটে শেয়ার করেছেন। যাতে এই করুণ আর্তি জানাতে দেখা গেছে ইয়াসমিনকে। এসময় পুলিশ কর্মকর্তা তাকে আশ্বাস দেন, ‘আমরা আপনার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছি। সে এখন আমাদের হেফাজতে আছে। কোর্টের মাধ্যমে আইনী প্রক্রিয়ায় আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করব। আপনাকে যে যন্ত্রণা দিয়েছে, তার সেই যন্ত্রণার ব্যবস্থা আমরা করব। আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন।’
যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে গৃহবধু বলতে থাকেন, ‘দুই তিনবার আমার গলা টিপে ধরছে আর চামড়গুলা তুলতেছে। আর বলতেছে, বিষ কমছে? আমি চিৎকার দিলে বলছে, জবাই করে দিবে। ম্যাচটা এতটুকু কাছে আনতেই জ্বালায়ে দিছে আগুন। বলছি, আমার ছেলে নিয়ে চলে যাব। আমারে যাইতে দেও। মরে গেলে মায়ের পাশে আমারে কবর দিও। বলছে, তোরে কর্ণফুলী নদীতে কেটে ভাসিয়ে দিব। আমার জ্বলতেছে স্যার…..।’
গতকাল শুক্রবার শামীম আনোয়ার জানান, ‘তোর বিষ কমাচ্ছি’ বলেই ইয়াসমিনের যোনি ও পায়ুপথসহ পুরো নিম্নাঙ্গে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী। ৭ বছরের সংসার এবং ৪ বছর বয়সী সন্তানের দোহাই দিয়ে অসহায় ইয়াসমিন স্বামীর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও স্বামী রাফেলের তাতে কোন ভ্রূক্ষেপ করেনি।’ ইয়াসমিনের শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এই নারকীয় ঘটনায় হতবাক হয়ে গেছে দেশবাসী। শুক্রবারই রাফেল (৩০) নামের সেই পিশাচকে আটক করেছে পুলিশ।
শামীম আনোয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরও লিখেছিলেন, ‘পুড়তে পুড়তে এক পর্যায়ে শরীরে লেপ্টে থাকা পেট্রোল ফুরিয়ে গেলে ইয়াসমিনের শরীরের আগুনও নিভে যায়। কিন্তু নেভেনি রাফেলের নিষ্ঠুরতার আগুন। এবার নতুন খেলায় মাতে সে। স্ত্রীর পোড়া শরীর থেকে কাবাব করা মুরগির মতো করে চামড়া তুলে নিতে থাকেন দুই হাতের ঘষায়। একেক ঘর্ষণের সাথে খসে পড়তে থাকে পুড়ে যাওয়া চামড়া, সাথে ইয়াসমিনের মরন আর্তচিৎকার।’
‘কিন্তু তাতেও রাফেলের নিষ্ঠুরতায় কোন হেরফের ঘটে না। উল্টো মেয়ের যন্ত্রণার খানিকটা ভাগ বাবা-মাকেও দিতে ফোন করেন ইয়াসমিনের বাসায়। এত গভীর রাতে জামাইর ফোন পেয়ে উৎকন্ঠিত শাশুড়ী ফোন তুলতেই তাকে সোজা জানিয়ে দেন, ‘তোর মেয়েকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি। এসে নিয়ে যা’। রাফেলের পাশবিকতা-হিংস্রতার এখানেই শেষ নয়। পৈশাচিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করে আর্তচিৎকার করতে থাকা স্ত্রীকে রেখেই পাশের কক্ষে গিয়ে দিব্যি ঘুমিয়েও পড়েন তিনি।’
‘উপরের ঘটনাবলির বর্ণনা শুনে যদি অবাক হয়ে থাকেন, গ্রেপ্তারের পর রাফেলের আচরণের বিষয়ে জানলে হতবাক হবেন নিশ্চিত। আজ (শুক্রবার) বিকেলে পালানোর চেষ্টারত অবস্থায় আসামি রাফেলকে গ্রেপ্তার করি আমরা। প্রেপ্তারের বিষয়ে তার কোন বিকার নেই। নেই নিজের কৃতকর্মের জন্য ন্যূনতম অনুতাপবোধও। উল্টো খোশ মেজাজের সঙ্গে জানালেন, তিনি গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেতে চান। থানার হাজতে বসে কাউকে এত নির্বিকারভাবে কথা বলতে আমি কোনদিন শুনিনি।’