বিপাকে মমতার তৃণমূল, পদত্যাগ শুভেন্দুর
পোস্ট ডেস্ক : আগামী বছরের গোড়ার দিকে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন। তার আগে বড় ধাক্কা রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে। তৃণমূলের সাথে সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতেই দিলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা, নন্দীগ্রামের বিধায়ক, ক্যাবিনেট মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সেচ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব সামলাতেন শুভেন্দু। কিন্তু শুক্রবার ওই দুইটি মন্ত্রণালয় থেকেই পদত্যাগ করেন ৪৯ বছর বয়সী শুভেন্দু। তিনি তার পদত্যাগপত্র ফ্যাক্স করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জিকে পাঠিয়ে দেন। পরে ইমেল মারফত সেই পদত্যাগপত্র যায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারের কাছে। রাজ্যপাল সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো পদত্যাগ পত্রে শুভেন্দু জানান ‘মন্ত্রিত্ব থেকে আমি পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি দিচ্ছি। এই ইস্তফাপত্র অবিলম্বে গ্রহণ করা হোক। রাজ্যের মানুষের সেবা করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।’
তবে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও এখনই দলের বিধায়ক ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছেন না শুভেন্দু। যদিও বৃহস্পতিবারই ‘হুগলী রিভার ব্রিজ কমিশন’ (এইচআরবিসি)-এর চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শুভেন্দু। ‘হলদিয়া ডেভলপমেন্ট অথরিটি’র মতো একটি স্বশাসিত সংস্থার চেয়ারম্যান থেকেও পদত্যগ করেন তিনি। মন্ত্রী হিসাবে তিনি ‘জেড’ ক্যাটাগরির যে নিরাপত্তা পেতেন তাও প্রত্যাহার করতে চেয়ে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন শুভেন্দু।
নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে শুরু করে বহু আন্দোলনে মমতার সাথী ছিলেন তারই একসময়ের অত্যন্ত কাছের ও বিশ্বস্ত সেনাপতি বলে পরিচিত শুভেন্দু। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে মমতা ও দলের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে শুভেন্দুর। বাড়তে থাকে জল্পনাও। সংগঠনের শীর্ষ পদাধিকারীদের একাংশের কাজকর্মে যে তিনি ক্ষুব্ধ তা আর গোপন নেই। এমনকি তৃণমূলের মমতার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জির নেতৃত্ব নিয়েও দলের ঘনিষ্টদের কাছে নিজের ক্ষোভ ব্যক্ত করেন তিনি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক জনসভায় উপস্থিত থাকলেও দলের পতাকা ব্যবহার করেননি। রাজ্যের একাধিক জায়গায় ‘আমরা দাদার অনুগামী’ পোস্টার, ফ্লেক্স পড়লেও তাতে মমতা ব্যনার্জির ছবি ছিল না। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেসও। এমতাবস্থায় শুভেন্দুর মান ভাঙাতে তৃণমূলের তরফেও কম প্রচেষ্টা করা হয়নি। মমতার নির্দেশে তৃণমূলের সিনিয়র নেতা ও সাংসদ সৌগত রায় নিজে উদ্যোগ নেন কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।
এদিকে দলের সাথে শুভেন্দুর দূরত্ব বাড়তে থাকায় বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারাও তাকে তাদের দলে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
আর তাই শুভেন্দুর পদত্যাগের পরই রাজ্যটির বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দিয়েছেন যে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ কোন ভদ্রলোক তৃণমূলে থাকতে পারে না। এদিন দুপুরে উত্তরচব্বিশ পরগনা জেলার গোপালনগরে দিলীপ ঘোষ বলেন ‘কেবল শুভেন্দুই নয়, তৃণমূল থেকে অনেক নেতাই আগামীদিনে এভাবে চলে আসবেন। কয়েকজন সাংসদ ও বিধায়ক ইতিমধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বাকী নেতারাও চলে আসবেন। কারণ ওই দলে কোন ভদ্রলোক থাকতে পারে না। তৃণমূলে কোন গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা নেই, সম্মান নেই। এটার মধ্যে দিয়েই প্রমাণ হল যে তৃণমূলের শেষের শুরু হয়ে গেছে।’ যারা পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনের জন্য লড়াই করতে চান তাদের সকলকে বিজেপিতে আসার আহ্বানও জানান মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ।
এদিকে শুভেন্দু যখন রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন ঠিক তখনই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন কোচবিহারের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। শুক্রবার দুপুরে কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের সাথে দিল্লিতে পা রাখেন মিহির। সূত্রে খবর এদিন সন্ধ্যাতেই গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতে পারেন মিহির গোস্বামী। সেক্ষেত্রে আগামী বছরের বিধানসভার নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে বাড়তে থাকা এই অসন্তোষ ও দল বদলের ঘটনায় মমতার দল যে অস্বস্তিতে পড়বে সেকথা বলাই যায়।