করোনায় মৃত্যুর চেয়ে যে দেশে আত্মহত্যা বেশি
পোস্ট ডেস্ক : জাপানে করোনা ভাইরাসে পুরো বছরে যে পরিমাণ মানুষ করোনায় মারা গেছেন তার চেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন অক্টোবরে।
এর মধ্যে বেশির ভাগ আবার নারী। শুক্রবার জাপানের ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সি বলেছে,অক্টোবরে সেখানে মাসিক আত্মহত্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২১৫৩। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, পুরো বছরে সেখানে করোনায় মারা গেছেন ২০৮৭ জন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।
চার বার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন ইরিকো কোবায়াশি। প্রথমবার তিনি যখন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তখন এই যুবতীর বয়স ২২ বছর। তিনি ফুলটাইম কাজ করতেন।
কিন্তু বেতন ছিল কম। তা দিয়ে তিনি রাজধানী টোকিওতে বাসা ভাড়া আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারতেন না। কোবায়াশি বলেন, ওই সময়টা আমি ছিলাম নিতান্তই নিঃস্ব। আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর প্রথম তিন দিন হাসপাতালে তিনি ছিলেন অচেতন। তার এখন বয়স ৪৩ বছর। কাজ করেন একটি এনজিওতে। লিখছেন, নিজের মানসিক অবস্থা ও তার সঙ্গে সংগ্রাম নিয়ে একটি বই। কিন্তু তিনি জীবনকে যেভাবে অনুভব করেন, করোনা ভাইরাস তার রেশ টেনে ধরেছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে আমার বেতন কর্তন করা হলো। কোথাও কোনো আলোর দেখা পাচ্ছিলাম না। সারাক্ষণ অভাবের মধ্যে থাকতে হতো। মনে হতো, আমি আবার সেই দারিদ্র্যে ফিরে গিয়েছি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে অসংখ্য মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সঙ্কটে ভুগবে। গণহারে কর্মচ্যুতি, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা এর উদ্বেগ- এসবই এখন বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনকে ঘিরে আছে। জাপান সরকারের প্রকাশিত সময়োপযোগী ডাটা বলে দেয় করোনা ভাইরাস কি ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে মানুষের জীবনে। অন্য অনেক দেশ এমন সব ডাটা বা তথ্য প্রকাশ করে না। এর ফলে বোঝা সহজ যে, করোনা ভাইরাস বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে কি পরিমাণ দুর্ভোগে ফেলেছে। আত্মহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও টোকিওর ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটির সহযোগী প্রফেসর মিশিকো উয়েদা বলেছেন, জাপান এখন আর লকডাউনে নেই। অন্য দেশের তুলনায় জাপানে কোভিডের ফলে ক্ষতির পরিমাণ সামান্যই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে বড় আকারে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোতে একই রকম প্রবণতা অথবা এর চেয়ে বেশি মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার হার যেসব দেশে তার মধ্যে অন্যতম জাপান। ২০১৬ সালে সেখানে প্রতি এক লাখ মানুষে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার ছিল ১৮.৫ ভাগ। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে প্রতি লাখ মানুষের বিপরীতে মৃত্যুর হার ছিল ১০.৬ ভাগ। জাপানে আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। সেখানে কর্মঘন্টা অনেক বেশি। স্কুলে অত্যধিক চাপ। সামাজিক আইসোলেশন। সাংস্কৃতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা সহ নানা কারণে মানুষের মনের মধ্যে অসুস্থতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে তারা আত্মহত্যার দিকে উদ্বুদ্ধ হয়। ২০১৯ সালে শেষ হওয়া গত ১০ বছরে জাপানে আত্মহত্যা কমে গিয়েছিল। এ সময়ে আত্মহত্যা করেছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ১৯৭৮ সালে স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর রেকর্ড রাখা শুরু করে। তারপর এটাই সেখানে সর্বনিম্ন আত্মহত্যার সংখ্যা।