সিলেট সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে হয়রানীর অভিযোগ

Published: 29 November 2020

সিলেট অফিস : সিলেট সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক ফখরুল আলমের হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন আরব আমিরাতফেরত এক যুবক।

প্রাপ্য ১০ লাখ টাকা না দিয়ে তিনি ওই যুবকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে একের পর এক জিডি দায়ের করে চলেছেন। একপর্যায়ে ১০ লাখ টাকার চেক দিলেও সেটি ডিজঅনার হয়। পরে ওই যুবক চেক ডিজঅনার মামলা করেছেন। এমনসব অভিযোগ নিয়ে আজ রবিবার বেলা দেড়টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের ছালিয়া গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে আবুল কালাম আজাদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমি দুবাইতে ছিলাম। দেশে ফিরে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর খাদিমনগর ইউনিয়নের ইছরাক আলীর ছেলে ফখরুল আলমের সাথে পাথর বিক্রি ও পরিবহনের ব্যবসা শুরু করি। শুরুর দিকে তাকে নগদ ১০ লাখ টাকা প্রদান করি। ২০১৮ পর্যন্ত আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল, পরে আমি আলাদা হয়ে যাই। আমার পুঁজির ১০ লাখ টাকা লভ্যাংশসহ তিনি কিস্তিতে পরিশোধ করবেন বলে লিখিত প্যাডে জানান। ২০১৯ সালের শুরুতে ফখরুলের সাথে ব্যবসায় যুক্ত হন কাজীরবাজার এলাকার আব্দুল মোমিন মুন। মুনের প্রতিনিধি হিসেবে তার পক্ষে ব্যবসায় আমি সংশ্লিষ্ট হই। গেল ২৪ মার্চ ফখরুল ও মুন সাহেবের হিসেবনিকেশ শেষে যার যার লাভের অংশ নেয়া হয়েছে। এতে কোনো সমস্যা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ফখরুলের কাছে আমার পুঁজির ১০ লাখ টাকা চাইলে গত ২০ আগস্ট তিনি দেখা করতে বলেন। আমি দেখা করলে তিনি তার স্বাক্ষরযুক্ত আগের দেয়া প্যাড ফিরিয়ে নিয়ে ১০ লাখ টাকার একাউন্ট পেয়ি চেক দিয়ে ২৫ আগস্ট সম্পূর্ণ টাকা আমার একাউন্টে নিতে পারবো বলে জানান। ফখরুল ও আমার একটি মোটরসাইকেল ছিল যৌথ মালিকানায়। ২২ আগস্ট তিনি আমাদের ওয়ার্ডের মেম্বার দিলোয়ার হোসেনের কাছে অভিযোগ করেন, সাইকেলটি আমি আটকে রেখেছি। ওইদিনই মেম্বারের ঘরে এ নিয়ে বৈঠক বসে, ফখরুল উপস্থিত হননি। তার শ্বশুর সামসু মিয়া চৌধুরী, বড় ভাই ছয়ফুল আলম, শ্যালক শাহীন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মোটরসাইকেল ফখরুল নিয়ে আমার প্রাপ্য অর্ধেক ৩০ হাজার টাকা আমাকে দেবেন। এজন্য ফখরুলের সাথে আমার যাবতীয় লেনদেন ২৪ আগস্ট তার উপস্থিতিতে সমাধা হওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু ওইদিন মেম্বার জানান, থানায় আমার নামে অভিযোগ করা হয়েছে। আমি এয়ারপোর্ট থানায় গিয়ে জানতে পারি, ফখরুল আমার নামে হিসাব নিকাশ দিচ্ছি না, হুমকিধামকি দিচ্ছি বলে মিথ্যা অপবাদে জিডি করেছেন। এরপরও আমি ২৫ আগস্ট ১০ লাখ টাকার সেই চেক নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের নয়াসড়ক শাখায় গেলে ম্যানেজার জানান, ওই অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। ওইদিনই আমি এ ব্যাপারে এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ দাখিল করি।’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া এসআই বাশার বিষয়টি আপোসের জন্য উভয় পক্ষকে নিয়ে বসলেও ফখরুলের একগুয়েমিতার কারণে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ২৭ আগস্ট ফখরুল আবারও থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদে অভিযোগ দাখিল করেন। নানা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তিনি আমার নামে একের পর এক জিডি দাখিল করতে থাকেন। তার মা, শ্যালক শাহীন চৌধুরী, শ্যালকের বন্ধু আব্দুর রউফকে দিয়ে আমি, আমার বড়ভাই, ভাতিজা ও আমার শ^শুরের বিরুদ্ধে ৯টি জিডি দায়ের করেন।’

প্রবাসফেরত এই যুবক জানান, ২৩ নভেম্বর তিনি জানতে পারেন তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়েছে। ওইদিনই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন পান। তিনি বলেন, ‘নকল তুলে জানতে পারি আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিডির (নং-৯৮৭) প্রেক্ষিতে সমন জারি হয়েছে এবং আমি নাকি তা পেয়েছি বলে স্বাক্ষরও করেছি। অথচ আমি কোন সমনই পাইনি এবং সমনপ্রাপ্তির পত্রে আমার যে স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে, সেটিও জাল স্বাক্ষর। এই অভিযোগটির তদন্ত কর্মকর্তা এয়ারপোর্ট থানার এসআই অমিত টাকার বিনিময়ে এমন জালিয়াতি করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। কারণ তদন্তকালে তিনি টাকা দাবি করেছিলেন। আমি তা দিতে অস্বীকার করায় আইনের অপব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছেন।’

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘ফখরুল আমাকে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জাল কাগজপত্র তৈরি করে কোর্টে জমা দিয়েছিলেন। খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলোয়ার হোসেন সেই কাগজপত্র দেখে ছাড়পত্রও দেন। অথচ আমি ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর দুবাইয়ে যাই এবং ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট ফিরি। বিষয়টি চেয়ারম্যানও জানতেন এবং আমার পাসপোর্টে যাওয়া-আসার সিল রয়েছে। অথচ জালিয়াতিতে চেয়ারম্যান দিলোয়ার ফখরুলকে সহযোগিতা করেছেন। কারণ গত আগস্টে ইউনিয়ন পরিষদে জাতীয় শোক দিবস পালন না করায় চেয়ারম্যানকে নিয়ে গণমাধ্যমে যে লেখালেখি হয়েছিল আমি তা শেয়ার দিয়েছিলাম, চেয়ারম্যানের কার্যক্রমের প্রতিবাদ করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘১০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার হওয়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর আমি সালুটিকর ও সাহেববাজার পোস্ট অফিস থেকে রেজিস্ট্রি ডাকে এক মাসের মধ্যে টাকা দিতে ফখরুলের কাছে উকিল নোটিশ পাঠাই। জবাব না পেয়ে আমি ৫ অক্টোবর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা করি, যেটি এখন বিচারাধীন। এদিকে ফখরুল, তার ভাই সামসুল ও শ্যালক শাহীন চৌধুরী ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় আমার উপর হামলা করে। তবে লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় তারা সুবিধা করতে পারেনি। এ ব্যাপারে আমি ৭ অক্টোবর এসএসপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেই। কিন্তু তাদের হুমকির অবসান না হওয়ায় ২৩ অক্টোবর এয়ারপোর্ট থানায় জিডি দায়ের করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইছরাক আলী নিজের ছেলে ফখরুল ও সামসুলকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছিলেন। পওয়ার অব অ্যাটর্নির অপব্যবহার করে তারা বাবাকে মৃত দেখিয়ে তারা ২০১০ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের বন্দরবাজার শাখায় বাবার সম্পত্তি বন্ধক রেখে ২৫ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে। বিষয়টি ধরা পড়ায় ডিক্রিও জারি হয়েছে। গত ১২ অক্টোবর ফখরুল ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে বড়শালার একেএম বুরহান উদ্দিন একটি জিডি দায়ের করেন। ফখরুলের আপন চাচা আজমল আলী ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে একটি জালিয়াতি (সিআর) মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ফখরুলের বাবা ইছরাক ও মা জয়তুন নেছা তার মালিকানাধীন একই জমি একাধিকবার বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেছেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার ১০ লাখ টাকা যেমন উদ্ধার হয়নি, তেমনি পরিবারের সদস্যরাও মারাত্মক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ধূর্ত ফখরুল ও তার লোকজন আবার কখন মিথ্যা অভিযোগে আমার নামে আরও মামলা দিয়ে বসে এর নিশ্চয়তা নেই। জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা শঙ্কিত। আমার টাকা উদ্ধার, ফখরুল ও তার লোকজনের মামলা-জিডিবাজি বন্ধ এবং আমার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’