বাইবেলে সাতবার ‘সেলেট’ (সিলেট) বলা হয়েছে

Published: 2 December 2020

শফি আহমেদ : ‘সেলেট’ সিলেটের অনুরূপ এবং ইহার ব্যাপক অর্থের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ একটি শব্দ আবিষ্কৃত হয়েছে  হিব্রু বাইবেলে। শব্দটি বাইবেলে মোট সাতবার বর্ণিত হয়েছে।

‘সেলেট’ সিলেটের মতই একটি  ব্যাপক অর্থের শব্দ। তথ্যটি আমার বহুদিনের গবেষণালব্দ। অতঃপর আমার অফিসে কয়েকজন ব্রিটিশ-ইহুদী মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সহিত আলাপ করে  নিশ্চিত হই যে হীব্রুতে ‘সেলেট’ একটি বিরল শব্দ। যা ব্যবহৃত হয় কোন নেতৃত্ব, অগ্রণী, নিয়ন্ত্রণ বা দৃঢ় জাতিও বিশেষণ বুঝাতে। উল্লেখ্য এসবই সিলেটের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আমরা কয়েকটি বিশ্লেষণ দেখবো।

বাইবেলে যে ক’জন ঐতিহাসিক মহান গুণীজনদের কথা ব্যাপক ভাবে বর্ণিত হয়েছে তৎমধ্যে দানিয়েল অন্যতম। তিনিকে বুক অফ দানিয়েলের বীর বলে বিবেচনা করা হয়। ইহুদি, খ্রীস্টান এবং ইসলাম ধর্মেও তিনি সম্মানিত। তাঁর এই অভূতপূর্ব উঙ্খানের প্রারম্ভে মহান আল্লাহ্পাক তাঁকে একটি বিশেষ পদোন্নতি দান করেছিলেন।

বিশ্ব ইতিহাসের একজন সর্বাধিক ক্ষমতাদর সম্রাট যিনি গৌরবজ্জল জেরুজালেম ধ্বংস করে ছিলেন, ঐ বখতে নাসারার বেবিলন শহরেই সম্রাট কর্তৃক আল্লাহপাক দানিয়েল কে বিশেষ নেতৃত্ব, শাসক বানিয়ে ছিলেন। বাইবেলের ভাষায় তাঁকে বেবিলনের ‘সেলেট’ বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

‘সেলেট’ দানিয়েলের কার্যবলী এই গুরুত্বপূর্ণ বিস্তর অঞ্চলের পরবর্তী ইতিহাসকে ভীষণভাবে প্রভাবান্বিত করেছে। যেমন, অতঃপর বখতে নাসারার পতন হল। পারস্যরা জয় করে নিল বেবিলন কিন্তু দানিয়েল তাঁর বিশেষ গুনে ‘সেলেট’ অবস্থানে বহাল থাকলেন। এবং পারস্য পতনের কথাও তিনি আগাম জানিয়ে দিতে পেরেছিলেন।  এই ‘সেলেট’ থাকাটা তাঁর এমন ইতিহাস পরিবর্তনকারী কার্য সমূহ সম্পন্ন করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।

এখানে লক্ষণীয় দানিয়েল কোন কোন বর্ণনায়  একজন বনি ইসরাইলের নবী ছিলেন। তাঁর ক্ষেত্রে সেলেট বিশেষ শাসক বা নেতৃস্থানীয় রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বাইবেলে আরো ছয় বার ভিন্ন অর্থে সেলেট বলা হয়েছে যেমন শিল্ড, গোল্ডেন শিল্ড। উল্লেখ্য এ সবই  নিরেট মজবুত বস্তূ।

নেতৃত্বের রাজটিকা আমাদের সিলেটের কপালেও স্পষ্ট দৃশ্যমান।  প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, বালুসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট ‘পবিত্র ভূমির’ ভূমিকায় প্রাচীন কাল থেকেই নেতৃস্থানীয় বিবেচিত হয়ে আসছে। পৃথিবীর প্রাণকেন্দ্র পবিত্র মক্কাভূমির সহিত সদৃশ আরেকটি জমিনের সন্ধান মিলেছিল শুধু এই সিলেটেই। আর এই ঘটনাটি ছিল কেমন আন্তর্জাতিক। তিনশত ষাট বা বহুজাতীয় সাধুসন্তের হাতেই আবিষ্কারটি হল।

আলহামদুলিল্লাহ আমি সন্ধান করে মূল হিব্রু বাইবেলে সিলেটের একটি অনুরূপ শব্দ পেলাম।  কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মক্কা-সিলেট মাটির মিলের মত আরেকটি ইতিহাস অন্য কোথাও পেলামনা।

‘সেলেটের’ আরেকটি সংজ্ঞা ‘শিল্ড’ যা দৃঢ় বিশেষণ বহন করে। আমরা লক্ষ্য করলে দেখব এমন নিরেট ‘দৃঢ়’ ভিত সিলেট নামের সহিত ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সংস্কৃতে সিলেটকে বর্ণনা করা হয়েছে শীলাহাট বলে। সিলেটের নামকরণ নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত ধারণা হল এ অঞ্চলে শিলা বা পাথরের প্রাচুর্যের কারণেই এর নাম হয়েছে সিলেট।

এমনও বলা হয় সিলেটে আসার পথে হজরত শাহজালাল অনেক বড় বড় পাথর পড়ায় তিনি বলেন শিল হট যাহ (পাথর সরে যা)। এ থেকে  সিলহট নামের উৎপত্তি। ক্রমে তা  সিলেট নামে পরিচিতি লাভ করে।

অপর দিকে হিন্দু পুরাণে বলা হল, বিষ্ণু চক্রে খণ্ডিত সতীর শবদেহের যে ৫১টি খণ্ড উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় তার মধ্যে দু’টি পড়ে সিলেটে। যেহেতু সতীর অপর নাম শ্রী। তাই এই শ্রী এর সঙ্গে হড্ড (দৃঢ় হাড়) জুড়ে নাম হয় শ্রীহট্ট। যা পরে সিলেট নামে পরিচিতি পায়।

সপ্তম শতাব্দীতে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ভারত ভ্রমণের সময় এ এলাকাকে ‘শিলিচট্রল’ বলে উল্লেখ করেন।

একাদশ শতাব্দীতে বিশ্বখ্যাত মুসলিম পরিব্রাজক আল্ বেরুনীর কিতাবুল হিন্দ গ্রন্থেও  সিলেটকে ‘সীলাহেত’ বলে উল্লেখ করেন। অতঃপর ইংরেজ আমলেও কাগজ-পত্রে সিলহেট নামটির ব্যবহার ছিল।

তাহলে আমরা দেখতে পেলাম হিন্দু-মুসলিম, দেশি-বিদেশী সব মতধারণাই সিলেট নামের উৎপত্তিস্থলে একটি শিলা বা দৃঢ় জাতীয় বস্তূ বিদ্যমান।

কৌতূহলী পাঠকদের জন্য আরেকটু বাড়তি পরিবেশন। সম্রাট বখতে নাসারার যে বিখ্যাত স্বপনের ব্যাখ্যা একমাত্র দানিয়েল করতে পেরেছিলেন এবং এজন্য জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সম্রাটের নৈকট্য লাভ করেন। এর প্রধান অংশেও ছিল একটি স্বর্গীয় শিলা।

সম্রাটের স্বপ্নের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন ‘….আর আকাশ থেকে পাথর খণ্ড অবতীর্ণ হয়ে মূর্তিটির সবকিছু চুরমার করে দেয়ার অর্থ হলো একজন নবী আসবেন-যিনি এসব রাজত্ব ভেঙে চুরমার করে দেবেন’। তাহলে সেলেট দানিয়েল কৃত সম্রাট বখ্তে নাসারার স্বপ্নের তা’বিরে আকাশ থেকে একটি  শিলা অবতীর্ণ হওয়া মানে একজন নবী আসা বলা হয়েছে।

একটি শিলা, যা থেকে সিলেট নামের উৎপত্তি হয়েছে ধারণা করা হয়, তা হতে পারে গভীর অর্থপূর্ণ। গভীরতার মাপে যা আধ্যাত্মিক তাই সাধারণত শীর্ষস্থানীয় বিবেচনা করা হয়। আঁটসাঁট শিলার মতো নিচ্ছিদ্র অগাধ   পারমার্থিক সিলেটকে বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী বলা হয়।

বলা যায় এগুলো ঊর্ধ্বতর বুঝার বিষয়। কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ নয়। ধুলোবালি মিশা প্রাত্যহিক জীবনে বাংলাদেশের জন্য সিলেট কী একটি প্রেসোস স্টোন বা পলকাটা হীরা না?