ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে পুণরায় আলোচনা আজ

Published: 6 December 2020

পোস্ট ডেস্ক : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন আজ রবিবার ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে পুণরায় আলোচনা করবেন। গতকাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য মত পার্থক্য কাটিয়ে উঠার শেষ প্রান্তে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

শনিবার এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে টেলিফোন আলোচনার পরে মিঃ জনসন এবং মিস ভন ডার লেন একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে চলমান আলোচনার অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবুও, তিনটি বিরূপ ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়ে গেছে। আর তা হচ্ছে, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড, গভর্নেন্স এবং ফিশারি।

উভয় পক্ষই জোর দিয়েছেন যে, এই সমস্যাগুলির সমাধান না হলে কোনও চুক্তি সফল হবেনা। ফলে আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে তারা সম্মত হয়েছেন।

মিস ভন ডার লেন টুইট করেছেন, ‘ইইউ-যুক্তরাজ্যের আলোচনায় বরিস জনসনের সাথে আমার টেলিফোনে কথা হয়েছে। এতে বেশ পার্থক্য রয়ে গেছে। এগুলি সমাধান না হলে কোনও চুক্তি সম্ভব নয়। আগামীকাল পুনরায় আমরা মিলিত হব। সোমবারেও আবার কথা বলব। দেখি কোনভাবে এগিয়ে যাওয়ার উপায় আছে কিনা।

ইউরোপীয় কমিশনের হেড অফ টাস্কফোর্স ফর রিলেশনস উইথ দ্য ইউনাইটেড কিংডম মিশেল বার্নিয়ার গত এক সপ্তাহে বৃটেনের সাথে ব্রেক্সিট নিয়ে অনেক দেন দরবার করছেন। বেশির ভাগ বিষয়ে ঐক্যমতের কাছাকাছি পৌছেও সমাপ্তি রেখা টানতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। মৎস্য আহরণ, ব্যবসায়ে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি এবং চুক্তিটি কার্যকর করা নিয়ে কিছু বিষয়ের সমাধান হয়নি। তবে মিশেল বার্নিয়ার শেষ মূহুর্তে কিছুটা অনড় হবার পিছনে ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোর কঠোর অবস্থানকে দায়ী করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো তাঁর দেশের মৎস্যশিল্প যাতে ব্রিটিশ জলসীমায় বিশেষ সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে চান। ফলে ফ্রান্স ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নেতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তার প্রমাণ মিলেছে ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেছেন, চুক্তিতে সন্তুষ্ট না হলে তাঁরা ভেটো দেবেন।

ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়ায় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে স্ট্রাসবুর্গ শহরে অবস্থিত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আলোচনায় মিশেল বার্নিয়ার বেশ আশাবাদী ছিলেন। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসা নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে ৫৮৫ পৃষ্ঠার খসড়া দলিলটা সেদিন সাংবাদিকদের দেখান তিনি। বার্নিয়ার বলেন, এই বিশাল খসড়া দলিলের যে সব অংশে সবুজ রং অর্থাৎ অমীমাংসিত বিষয় ছিল, তা এখন সাদা। অর্থাৎ বিষয়গুলো এখন মীমাংসিত। শেষ পর্যন্ত আমরা অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে একটা পর্যায়ে উপনীত হতে পেরেছি—যা উভয় পক্ষের জন্য একটি সুষম সমাধান। তবে এই খসড়া দলিল প্রস্তুত করতে আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। দীর্ঘ ১৮ মাস সময় লেগেছে।

বৃটেনের প্রধান সমন্বয়ক ডেভিড ফ্রস্ট বলেছেন, তিনি বহুভাবে চেষ্টা করেছেন উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে একটি ন্যায়ত সমাধানে পৌছতে। সপ্তাহের শুরুতে আলোচনা বেশ ইতিবাচক ভাবে এগিয়েছিল। তবে শেষ মূহুর্তে ইইউর মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে ১০ বছর যুক্তরাজ্যের জলসীমা ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার দাবির ফলে আলোচানা ভেস্তে যেতে বসেছে।

কোনভাবেই সমাধানে পৌছতে না পেরে মিশেল বার্নিয়ার ও ডেভিড ফ্রস্ট তাদের আলোচনা স্থগিত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তথা রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন। এই পেক্ষাপটে বরিস জনসন এবং উরসুলা ভন ডার লেন আলোচনায় এগিয়ে এসেছেন। উভয়ে গতকাল শনিবার কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারবেন বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্ত বাস্তবে তা হয়নি। তবে উল্লেখযোগ্য মত পার্থক্য কাটিয়ে উঠার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে উভয় পক্ষ এখন আশাবাদী। এদিকে চুক্তি করার সময় দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। যদিও চলমান নিয়ম মোতাবেক যুক্তরাজ্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য বিধিমালা মানবে।