বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

Published: 15 December 2020

।। মীর আব্দুল আলীম।।

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের এ মাসের ১৬ তারিখে বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয় বাঙালির স্বাধীন আবাসভূমি বাংলাদেশ। আর এর স্থপতি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন তার দেশকে। স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় ছিল কেবলই বাংলাদেশ।

এ জন্য সারা জীবন জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন তিনি। ফাঁসির দড়িও তাকে লক্ষ্য থেকে একচুল নড়াতে পারেনি কখনও।
টানা ৯ মাস সংগ্রামের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধু বিজয়ীর বেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশে। ফিরে আসেন তার প্রিয় জনগণের মাঝে। নিজেকে সঁপে দেন দেশ গড়ার কাজে। শুরু হয় জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিলাভের সংগ্রাম। সেটা যেন আরেক সংগ্রাম। দেশের মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংগ্রাম।
সন্দেহাতীতভাবেই বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য ছিল তার দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন ঘটানো। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি একটা সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন, যে সোনার বাংলার উপমা তিনি পেয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে। ভালোবেসে বঙ্গবন্ধু সেই সোনার বাংলার স্বপ্নকে তার দেশের জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনসহ সব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। এর মধ্যে তিনি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিল্পকে। শিল্প বিপ্লব ঘটাতে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পথপ্রদর্শক। দেশকে এগিয়ে নেয়ার অগ্রনায়ক।
তিনি শোষণহীন সমাজ গঠনের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন আপসহীন। বিপন্ন জীবনের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। ভাবতেন দেশ কিভাবে সমৃদ্ধ হবে। তাই কৃষিক্ষেত্রে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট থমকে যায় তার সব পরিকল্পনা।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক বিশাল প্রতীক এবং নিরন্তর প্রেরণার উৎস। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি প্রায় সিকি শতাব্দী সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন এবং তারই ফলে মানুষের মনে তার চিন্তা-চেতনা গভীরভাবে প্রভাব ফেলে এবং ধাপে ধাপে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ আন্দোলনকে রাজনৈতিক সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত করেন।
যেভাবে তিনি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন, তাতে বিস্মিত হয়েছিল সারা বিশ্ব। তার ৭ মার্চের ভাষণ যে শুনেছে, তারই শরীরে বয়ে গেছে বিদ্যুৎপ্রবাহ। কী ছিল সে ভাষণে? কোনো অজ্ঞাত তথ্য নয়, কোনো অপ্রত্যাশিত ঘোষণা নয়, ভাষার কোনো কারুকার্য নয়, বলার কোনো পরিশীলিত ভঙ্গি নয়।
তাতে ছিল এ দেশের সর্বশ্রেণির মানুষের প্রাণের কথা। মানুষের সঙ্গে এই আন্তরিকতার বন্ধন গড়ে উঠেছিল বলেই তো শত্রুদেশে বন্দি থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে তার প্রেরণা ছিল সক্রিয়। স্বাধীনতা লাভের জন্য যেমন দৃঢ় সংকল্পবব্ধ ছিল সবাই, তেমনি প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল তার নেতৃত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তোলার।
বিজয় এসেছে। বাঙালি জাতি পেয়েছে একটি স্বাধীন দেশ। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি দেশ সগর্বে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু এই অর্জনের নেপথ্যে যে মহান ব্যক্তিটির নিরঙ্কুশ অবদান, তাকে ছাড়া কি তা অর্থবহ হতে পারে? তাই গোটা জাতি অধীর অপেক্ষায় ছিল কবে ফিরবেন অবিসংবাদিত নেতা। কবে পূর্ণতা পাবে স্বাধীনতা অর্জন।
সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলার মাটিতে পা রাখলেন। সেদিন স্বজন হারানো ও সর্বস্বান্ত মানুষ হৃদয় উজাড় করে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে বরণ করে নিয়েছিল। নেতা ও জনতার আনন্দাশ্রু মিলেমিশে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এমন একজন নেতা এদেশে আর জন্মায়নি। তার মতো করে বাংলাকে আর ভালোবাসেনি কেউ; কেউ দেশের মানুষকে তার মতো করে আগলে রাখেনি। হাজারও সালাম এ নেতার প্রতি।