বিলাহারি কাউসিকানের আলোচনা : ইইউ কি কৌশলগত দিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হতে পারে!

Published: 16 December 2020

পোস্ট ডেস্ক : ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মূল্যবোধ ও নীতিগুলোকে মেনে নিয়ে বিশ্বে যেকোনো দেশই তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ইউরোপীয়দের ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে সবথেকে দুর্বল বিষয় হচ্ছে, যদি আপনার ক্ষমতা থাকে তবে আপনাকে তারা সম্মান করবে। নমনীয় একক শক্তি এখানে খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তাই আপনার কঠিন এবং নরম উভয় ধরনের শক্তি থাকতে হবে। ইউরোপীয়দের এই বৈশিষ্ট্যের কথা আলোচনা করেছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের সাবেক সচিব বিলাহারি কাউসিকান।
লেখায় তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর তার ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আলোচনায় বসে তখন বাণিজ্যমন্ত্রী একটি কূটনৈতিক পত্র পেয়েছিলেন ইইউ উপদেষ্টার কাছ থেকে। সেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের মুক্ত-বাণিজ্য অঞ্চলের মতো একটি বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল। জবাবে সিঙ্গাপুরের মন্ত্রী বলেছিলেন, আপনার যেহেতু সেভেন্থ ফ্লিট রয়েছে, তখন এরকম অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা যেতেই পারে।
এই বিষয়টি থেকে বুঝা যায়, ইইউ’র উচ্চাকাক্সক্ষা ও বাস্তবতা পুরোপুরি বিপরীত।

ইইউ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোট। আর এ কারণেই সিঙ্গাপুর তাদের সঙ্গে এফটিএ বিষয়ক আলোচনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু ইইউ তার ভূ-রাজনৈতিক চাহিদাই বাস্তবায়ন করতে পারেনি সেখানে এটি বিদেশী দেশগুলোর সুরক্ষা নীতি কিভাবে পূরণ করতে সক্ষম হবে। ইইউ এর ভূ-রাজনৈতিক উদ্যেগের বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ইউক্রেন।
বিলাহারি কাউসিকান বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি কিয়েভে ছিলাম এবং ইউরো নিয়ে সেখানকার বিক্ষোভগুলো খুব কাছাকাছি থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। ইউক্রেনের জনগণ মূলত গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার বিষয়গুলোকে বেশি জোর দিয়েছে। ইইউ যদিও কোনো ধরনের মধুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি করেনি। সে যাইহোক, আমি মনে করি এ ধারণাটি জাগ্রত হয়েছে ১৯৫৬ সালের হাঙ্গেরির মনোভাব থেকে।
এটি বুঝতে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক হতে হয় না যে, রাশিয়া কখনই স্থায়ীভাবে ইউক্রেনকে পশ্চিমের সঙ্গে যুক্ত হতে দেবে না। মস্কোও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য। রাশিয়ার কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানানোর পরও এই প্রতিক্রিয়ার কোন প্রতিরোধ না করে ইইউ পুনরায় কিয়েভকে উৎসাহিত করে যাচ্ছিল। ঠিক এখন যেমন ইইউ নিজেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে। শেষ অবধি আমেরিকার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ইইউ তার কিছু কিছু সমস্যার সমাধানে আসতে পেরেছ যা আজও ধোঁয়াশা হয়ে আছে। প্রাক্তন যুগোস্লোভিয়ার ক্ষেত্রেও এই একই প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। ইউরোপ নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র তার ক্ষমতার বাইরেও কাজ শুরু করেছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি তার নিজের আশেপাশের ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখতে না পারে। কাছের দেশ রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশ বা সার্বিয়ার মতো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক যদি সুসংগঠিত এবং কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তবে ইইউ কিভাবে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী হতে পারে! ‘কৌশলগত দিকে শক্তি বলতে আমি এর ক্ষমতার সমস্ত মাত্রাকে একত্রিত করাকে বুঝাতে চেয়েছি’।
এটি আমেরিকান বা ইউরোপীয়দের মতো ছিল না যেখানে ইউক্রেন বা রাশিয়ায় ঊনবিংশ শতকের পদ্ধতিতে একবিংশ শতাব্দীতে এসে কাজ করবে। তবে এটি ছিল ইউরোপীয়দের একটি বোকামিপূর্ণ মিথ্যা ধারনা। এর মূলে রয়েছে ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক দুর্বলতা। যদি আপনার ক্ষমতা থাকে এবং তা প্রয়োগ করার ইচ্ছা থাকে তবে আপনি প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। এখানে একক কোন শক্তি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না তাই আপনার উভয় শক্তি থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন ওই সাবেক কর্মকর্তা। অপেক্ষাকৃতভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বলা যায় য়ে, নমনীয় শক্তি সবসময় অপেক্ষকৃত বেশি শক্তির উপর নির্ভর করে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরের সব থেকে মারাত্মক সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে, দক্ষিণ এবং পূর্ব চীন সমুদ্রের সামুদ্রিক বিরোধগুলো, তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়া এবং হিমালয় নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার বিরোধ। এখানে ইইউ কেবল এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে যেখানে এই দেশগুলোর পতাকার রংগুলোকে আরো উজ¦ল করে তুলেছে। এটি ভালো তবে একটি মাত্র উপায়ে বা অন্যভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া এখানে সম্ভব করতে পারেনি ইইউ। ইউরোপ এই অঞ্চলের দেশগুলো কাছে অপ্রাসঙ্গিক না হলেও কৌশলগতভাবে এখানে তারা শেষের দিকে থাকবে।
বৃটিশ জেনারেল তখন কঠোর ক্ষমতার বিষয়ে যা বলেছিলেন এখানে তা খুবই স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তবে সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো একটি আলাদা পর্যায়ে আছে। যেখানে ওই কঠোর শক্তির প্রভাব কখনই পুরোপুরি অনুপন্থিত থাকে না কিন্তু সেখানে সত্য ছাড়াও আরো অনেক কিছু রয়েছে। যে ইউরোপ এককালে পুরো বিশ^ শাসন করেছিল, তারা কেন তবে এতটা নমনীয় হয়ে পড়েছে বা এখন আর তারা কঠোর বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করেনা।
বার্লিন ওয়াল সরিয়ে নেয়ার পর কিছু ইউরোপীয় দেশ অনেকটা বোকামি করে ন্যাটোকে পূর্বদিকে বিস্তার করার জন্য চাপ দিয়েছিল। আমেরিকাও এই বিষয়টি মেনে নিয়ে সরে যায়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ন্যাটোর প্রতিরোধের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছিল সেসময়।