শেষ পাতে
।। নীল সরকার ।। বছরটা লক ডাউনেই খেয়ে নিল। বছরের সালতামামি করতে বসলে হাতে থাকল পেন্সিল বলা যাবেনা।
দেখুন কত নতুন শব্দ জুড়েছে আমাদের নিত্যদিনের কথাবার্তাতে।
সামাজিক দূরত্ব, লক ডাউন, কো-মরবিড, হাত সংস্কার, পিপি, মুখোশ। এখন তো রেগে গেলে বলা যাবে না, মুখোশ খুলে দেব। মুখোশ না পরলেই বরঞ্চ দন্ড।
ছাত্রদের কথা ভাবুন। তারা শুনে এল শিক্ষা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জাতির গঠনে। কিন্তু লক ডাউন শুরু হতে কি মজা হল? বিদ্যালয় চলে গেল মোবাইল বা ল্যাপটপে। তাও চরম সীমাবদ্ধতা। সর্বত্র নেটের গতি সমান নয়, কোথাও নেই।
প্রযুক্তির অসমান বন্টনের কারণে বড় বা মাঝারি শহরের পড়ুয়ারা সৌভাগ্যবান। প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেটি বছর ভোর বিদ্যালয় বন্ধ দেখল। তার সময় বইয়ের পাতা উল্টে কাটল। পরীক্ষা না নিতে পেরে পাশফেল লঘু। নম্বর হাত খুলে। যেন টি টোয়েন্টি। অথচ বাকী সব এক এক করে খুলে গেল। বাসে-ট্রেনে ছাত্রছাত্রীদের পথ চলা থামেনি। শুধু থমকে গেল ভবিষ্যত গড়ার কাজটা।
আমাদের বিদ্যার জোরে এমন মারণ রোগের মোকাবিলা উপযুক্ত সার্বিক প্রযুক্তি আজও অধরা। তাহলে সকলে সমানভাবে শিক্ষার সুযোগ পেলনা। একটা বছর জীবনে বড় সময়। জাতি দূর্বল হতে পারে শিক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে।
সারা দুনিয়া জুড়ে ডিজিটাল দাপাদাপি। মানুষ সংক্রমণের ভয়ে মেনে নিয়েছেন ডিজিটাল মাধ্যমের কাছে আত্মসমর্পণ করতে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ দেখছি স্মার্ট ফোনে হাত মোকশ করছেন। টিকা বা ভ্যাকসিন বিষয়ে চর্চা চরমে। একদিকে জীবনের প্রশ্ন, অন্য দিকে বাজারের হাত ছানি। করোনা শব্দটা প্লেগ, ফ্লুর মতো চিরকাল থেকে যাবে সভ্যতার ইতিহাসে। সংকট নতুন উদ্ভাবন আনে। এবারও এল।
জীবন সচল রাখতে বিকল্প ছিল না। মোবাইলে হাত দিলে অভিভাবকদের বকাবকি হারিয়ে গেল চিরতরে। ভার্চুয়াল মিটিং এ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বিচারে রায় হচ্ছে। আমরা এক বছরেই অভ্যস্ত হলাম। নতুন জীবন নতুন জীবন ধারা।
কাগজ ব্যবহার কমেছে। দূষন কমেছে। ভাবি কালে করোনার আগে ও পরে দুটো সময়ে ইতিহাস মনে রাখবে।