ভ্যাকসিন কার্যকর কতটুকু?
ব্রিটেনের শক্তিশালী করোনাভাইরস ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে

Published: 27 December 2020

মো: রেজাউল করিম মৃধা : চীনকে করোনাভাইরসের দেশ এবং উহানকে কেন্দ্র স্থল বলা হলেও বর্তমানে ব্রিটেনের থেকে নতুন শক্তিশালী করোনাভাইরসে বেশী আতংকিত সারা বিশ্ব। এ জন্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশ সকল ধরনের যোগাযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছে। যে সব দেশের সাথে বিমান যোগে যাত্রীরা যাতায়াত করছেন সেই সব দেশেই নতুন এই শক্তিশালী করোনার রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

দি ওয়াল্ড হেল্থ অরগানাইজেশন (WHO) বলেছে “ইউকে র নতুন ভারিয়েন্ট কভিড-১৯ এর স্টাইন এতটা শক্তিশালী যে আগের যেকোন ভাইরাসকে হারমানিয়েছে”।
এটা পূর্বের চেয়ে ৭০ গুন শক্তিশালী এবং অতিদ্রুত রোগ ছড়িয়ে পরে।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর ব্রিটেনে শনাক্ত হয় করোনার নতুন রূপ। এ পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের শতাধিক জায়গায় শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাসটি। সংক্রমিত হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ।

ব্রিটেন থেকে ছড়িয়ে পড়া অধিক সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ইউরোপে ফ্রান্সের পর সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড এবং এশিয়ায় জাপানে নতুন বৈশিষ্ট্যের এ করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

সুইডেন- সুইডেনে এক ব্যক্তির দেহে এই নতুন ধরনের ভাইরাস পাওয়া গেছে। ব্রিটেন থেকে ফেরা এক সুইডিশ নাগরিকের শরীরে ২৬ ডিসেম্বর শনাক্ত হয় নতুন করোনা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সুইডিশ স্বাস্থ্য সংস্থা।

সুইজারল্যান্ড – ভাইরাসটিতে আক্রান্ত অন্তত তিনজন রোগী পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে সুইজারল্যান্ড। তাদের দুজন ব্রিটিশ নাগরিক।
সুইজারল্যান্ড তাদের স্কি রিসোর্টগুলো খোলা রেখেছে এবং গত দুই সপ্তাহে সেখানে হাজার হাজার পর্যটক হাজির হয়েছে।

জাপান- ২৫ ডিসেম্বরে জাপানে শনাক্ত হয় করোনার নতুন রূপ। যে ব্যক্তিটি সংক্রমিত হয়েছেন তিনি ব্রিটেন থেকে ফিরেছেন।

অস্ট্রেলিয়া- গত ২১ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তাদের দু’জন নাগরিক যারা যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেছে তাদের শরীরে করোনার নতুন রূপ শনাক্ত করা গেছে।

নেদারল্যান্ডস- ২২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো ডি ইয়ং বলেছেন তাদের দেশেও শনাক্ত হয়েছে করোনার নতুন রূপ। যথারীতি তাদের দেশেও এটি ছড়িয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে।

ইতালি- ২৩ ডিসেম্বর ইতালিতে নতুন করোনায় আক্রান্ত দ্বিতীয় ব্যক্তি শনাক্ত হয়। যদিও তিনি কোনো দেশ থেকে ফিরেননি। নিজ দেশে, নিজ এলাকায় থেকেও তিনি নতুন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

নাইজেরিয়া- ২৪ ডিসেম্বর আফ্রিকান রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (আফ্রিকা সিডিসি) জানিয়েছে নাইজেরিয়ায় নতুন করোনায় আক্রান্ত হওয়া এক ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। যদিও তিনি যুক্তরাজ্য কিংবা অন্য কোথাও থেকে ফিরেননি।

সিঙ্গাপুর- ২৪ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা এক সিঙ্গাপুরের নাগরিকের শরীরে করোনার নতুন রূপ শনাক্ত হয়।

ফ্রান্স- ২৫ ডিসেম্বর ফ্রান্সে করোনার নতুন রূপে সংক্রমিত হওয়া এক ব্যক্তি শনাক্ত হন। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেছিলেন। যদিও তার শরীরে কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি।

লেবানন– ২৫ ডিসেম্বর লেবাননেও শনাক্ত হয় নতুন রূপ। যে ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন তিনি ২১ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে ফিরেছেন।

কানাডা- ২৬ ডিসেম্বর কানাডার অন্টারিও প্রদেশে নতুন করোনার এক ব্যক্তি সংক্রমিত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্হ্য সংস্থা।

ডেনমার্ক- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে ডেনমার্কে এ পর্যন্ত ৯ জন নতুন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

স্পেন- আটলান্টিক পাড়ের দেশ স্পেনে এ পর্যন্ত ৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন যারা নতুন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তারা সবাই ব্রিটেন থেকে ফিরেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা- গেল সপ্তাহে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয় নতুন করোনা।

গবেষকরা মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই এই নতুন ভাইরাসটির এসেছে এবং ব্রিটেনে এসে নতুন রূপটি ধারন করেছে।

লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে করোনাভাইরাসের এই নতুন এবং অত্যন্ত সংক্রামক স্ট্রেইনটি ছড়িয়ে পড়ে। এটি আগের ভাইরাসের চেয়ে আরও বেশি সহজে এবং দ্রুত গতিতে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এর ফলে আগামী বছর এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার আরও বেড়ে যাতে পারে। বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যাও।

সমীক্ষাটি চালিয়েছে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন-এর সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল মডেল অব ইনফেকশাস ডিজিজ। এতে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের অন্যান্য স্ট্রেইনের তুলনায় নতুন এই স্ট্রেইনটি ৫৬ শতাংশ বেশি সংক্রমণযোগ্য।

ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যাল্যান্স বলেছেন, ভাইরাসটির প্রায় দুই ডজন মিউটেশন রয়েছে যা প্রোটিনকে প্রভাবিত করতে পারে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভাইরাসটির নতুন এই স্ট্রেইন সদ্য অনুমোদন পাওয়া ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।

ইউরোপের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, নতুন স্ট্রেইনটির ফলে হয়তো ফাইজার ও বায়োএনটেক-এর টিকার কার্যকারিতায় খুব বেশি হেরফের হবে না। তবে ভ্যাকসিন নয় নিজেদেরই আরো বেশী স্বচেতন হতে হবে।

করোনাভাইরাসের এই নতুন রূপটি খুবই সংক্রামক হলেও এতে মৃত্যুহার বেশি কিনা সেটা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি।

মহামারি করোনার নতুন প্রজাতি বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে চলছে। এ পর্যন্ত তিনটি নতুন রূপ শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাসটির। এই রূপগুলো ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে। যা খুবই মারাত্মকজনক সংক্রমক, এটি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ছড়াতে পারে।তাই ব্রিটেন কে বিছিন্ন করেছে সারা বিশ্ব।

সবাই শতর্ক থাকুন, সরকারি সকল বিধিনিষেধ মেনে চলুন । আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন আমিন।