ব্রেক্সিট ইস্যুতে ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকে নিয়ে নিন্দার ঝড়

Published: 2 January 2021

পোস্ট ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বিদায় নেয়ার সময় ব্রেক্সিটকে ‘মিথ্যা ও ভুল প্রতিশ্রুতি’র ফসল বলে দাবি করে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গতকাল সর্বত্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছেন। ব্রেক্সিট গণভোটের চার বছরেরও অধিক সময় পর ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের এই কটূক্তিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু মানুষ ধিক্কার জানিয়েছেন। তারা এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ক্ষমতালোভী ও স্বার্থপর হিসেবে নিন্দা করছেন।

জাতির উদ্দেশ্যে নতুন বছরের ভাষণে ব্রেক্সিটকে ‘মিথ্যা ও ভুল প্রতিশ্রুতি’ আখ্যায়িত করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। গতকাল রাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর বৃটেনের সার্বভৌমত্বের বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্যারিসের এলিসি প্রাসাদ থেকে দেয়া ভাষণে মি. ম্যাক্রোঁ এ বক্তব্য রাখেন।

এক ভিডিও বার্তায় ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, কিছু দিন আগে, আমরা আমাদের স্বার্থ, আমাদের শিল্প, আমাদের জেলে এবং আমাদের ঐক্য রক্ষা করে আমাদের ভবিষ্যতকে সংগঠিত করার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি। যুক্তরাজ্য আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের বন্ধু এবং মিত্র হিসেবে রয়ে গেছে। তাদের ইউরোপ ত্যাগ করার এই পছন্দ, এই ব্রেক্সিট ছিল ইউরোপীয় বিপর্যয়ের এবং প্রচুর মিথ্যা ও ভুল প্রতিশ্রুতির সন্তান।

এদিকে প্রথমবারের মতো এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্পর্কে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন তার পিতা জিন-মিশেল ম্যাক্রোঁ। ৭০ বছর বয়সী জিন-মিশেল পুত্র এমানুয়েলকে স্বার্থপর রাজনীতিক বা সেল্ফ সার্ভিং পলিটিশিয়ান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম তার পিতা প্রকাশ্যে জনসাধারণের সামনে এমন বক্তব্য রাখেন। জিন-মিশেল পিকার্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজির অধ্যাপক।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য চুক্তির পর নতুন যুগের সূচনা হওয়ার সাথে সাথেই ডোভার এবং ডাবলিন বন্দরে লরিগুলি যখন ফ্রান্সের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং ইউরো টানেলের কর্মকর্তারা মধ্যরাতের ঠিক পরেই প্রথম ট্রাকটিকে যুক্তরাজ্যে স্বাগত জানাচ্ছিলেন, এমন সময় ম্যাক্রোঁর উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রকাশিত হয়।

ব্রেক্সিটার টরি এমপি পিটার বোন ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, আমার জীবদ্দশায় সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক ঘটনা হচ্ছে ইইউর গণভোট। ইউকেতে অতীতে আর কখনো এতো বেশি লোক ভোট দেয়নি। এটি ছিল নির্দিষ্ট বিষয়ে সত্যিকারের বিতর্ক। এটি দলীয় রাজনীতি ছিল না। এটি হল সর্বদলীয় জনগণের মতামত। আমার ধারণা, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ গণতন্ত্র পছন্দ করেন না।

মি. ম্যাক্রোঁ, যিনি বৃহত্তর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একীকরণের জন্য মহা উচ্চাশা পোষণ করেছেন, তিনি মাছ ধরার দাবিতে ব্রেক্সিট চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সর্বত্র দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এমন মন্তব্য শুরু করেছেন। ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে করোনা ভাইরাসের নতুন রূপের স্ট্রেইন নিয়ে বৃটেনের মালামাল পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে ব্রেক্সিট আলোচনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে মতলববাজি হিসেবে সচেতন জনগণ অভিযুক্ত করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক আনন্দঘন মেজাজে নতুন বছর শুরু করছেন। তিনি ২০২০ সালের ভীতিকর অবস্থার অবসান এবং ২০২১ ‘পরিবর্তন ও আশার বছর’ হবে বলে আশাবাদী। তিনি ব্রেক্সিটের মাধ্যমে নতুন দিগন্তের উন্মোচন এবং সেই সাথে নতুন ভ্যাকসিনগুলি করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বরিস জনসন ব্রেক্সিটকে ইউরোপ নিয়ে বেআইনী বাকবিতণ্ডার সমাপ্তি রেখা হিসেবে চিহ্নিত করেন, যা এতদিন বৃটেনের রাজনীতিকে বিভ্রান্ত করেছে।