স্বামীর চিতায় ঝাঁপ দিয়ে স্ত্রীর আর্তনাদ অত:পর
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : নিয়মের ফেরে পড়ে চাকরি হারিয়েছেন ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার এক শিক্ষক।
পরিবারে মা, বোন, স্ত্রী ও দুই সন্তান। মানুষগুলোর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার সামর্থ্য তার নেই। মাথার ওপর ঋণের বোঝা। পাওনাদারদের চাপ আর ব্যাংকের চিঠি নিয়মিত আসছেই। দিশেহারা ও উদভ্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নিলেন চাকরিচ্যুত শিক্ষক উত্তম ত্রিপুরা। স্বামীর মৃত্যুতে দিশেহারা স্ত্রীও আর বাঁচতে চান না। স্বামীর ফেলে যাওয়া দায়িত্ব আর ঋণের বোঝা বয়ে বেড়ানোর থেকে মৃত্যুকেই শ্রেয় মনে করছেন স্ত্রী শেফালি ত্রিপুরা। সেই সঙ্গে যাদের জন্য আজ তাদের পরিবারের এই পরিস্থিতি, তাদের বিচারও চাইছেন তিনি। খবর সংবাদ প্রতিদিনের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আসলে ত্রিপুরায় বাম আমলে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে বিভিন্ন সময়ে ১০৩২৩ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটির কারণে ২০১৪ সালে তাদের চাকরি বাতিল করে দেন ত্রিপুরা হাইকোর্ট। তখন থেকেই সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষকরা। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এই শিক্ষকদের অ্যাডহক ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগ করে ত্রিপুরা সরকার। কিছু শিক্ষককে নিয়োগ করা হয় সরকারের অন্যান্য বিভাগে। গত মার্চ মাসে এই অ্যাডহক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপর থেকেই কর্মহীন প্রায় ৮-৯ হাজার শিক্ষক। ক্ষমতায় আসার আগে এই শিক্ষকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আসলে কিছুই করে উঠতে পারেনি ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে ৭ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার গণবস্থান করছেন বিপদগ্রস্ত শিক্ষকরা। শীতের মধ্যে তারা গত ২৮ দিন ধরে আগরতলার প্যারাডাইস চৌমুহনীতে অবস্থান কর্মসূচি করছেন।
দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার এই চাকরিচ্যুত শিক্ষক উত্তম ত্রিপুরাও এই কর্মহীনদের মধ্যেই একজন। ৯ মাস কর্মহীন থাকার কারণে তার সংসারের অভাব-অনটন চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। পাওনাদারদের যন্ত্রণা আর স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার ব্যর্থতা বুকে নিয়ে শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করেন তিনি। শনিবার তার শেষকৃত্যের সময় আরো এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন তার প্রতিবেশীরা। দাহ করার আগে স্বামীর চিতার ওপর লাফিয়ে শুয়ে পড়েন তার স্ত্রী। আর্তনাদ করে বলেন, ‘আমাকেও স্বামীর সঙ্গে পুড়িয়ে দাও। আমি এর বিচার চাই।’ শেফালি ত্রিপুরা নিজের আবেগকে যেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। শেষপর্যন্ত প্রতিবেশীরা কোনরকমে তাকে ওখান থেকে তুলে আনেন। কিন্তু এরপর? সরকার কোনো ব্যবস্থা না করলে এই পরিবারের কারও মুখে এরপর হয়তো খাবারও জুটবে না।