ব্রিটেনে ৬ সপ্তাহের জাতীয় লকডাউন ঘোষণা

Published: 5 January 2021

পোস্ট ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রিটেন জুড়ে জাতীয় লকডাউন ঘোষণা করেছেন। সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি এই লকডাউন ঘোষণা করেন।


মিউট্যান্ট কোভিডের স্ট্রেইন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ব্রিটেনে জাতীয় লকডাউন ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, নতুন রূপের ভাইরাস ৫০ থেকে ৭০ শতাংশে সংক্রমণযোগ্য। অতএব ‘ঘরে অবস্থান করুন, এনএইচএস রক্ষা করুন, জীবন বাঁচান’।

সারাদেশে অপ্রয়োজনীয় দোকানপাট, হোটেল রেস্তুরাঁ সহ সমস্ত আতিথেয়তা, জিম, সুইমিংপুল ইত্যাদি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্কুল, কলেজ আগামী হাফটার্ম (ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকতে এবং দূর থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। বয়স্কদের ঘরে বা শেল্টার হাউজে থাকতে বলা হয়েছে। উদ্বাস্তু লোকদের পুনর্বাসন ক্ষেন্দ্রে বা যেখানে সম্ভব সেলটারে স্থান দিতে হবে। ধর্মীয় উপাসনার স্থানে সামাজিক দূরত্ব অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী গতরাত (সোমবার) ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে মধ্য ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আগামী ৬ সপ্তাহের জন্য এই লকডাউন ঘোষণা করেন।
তৃতীয় বারের মত জাতীয় লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বাবা-মাকে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর আহ্বানের ঠিক একদিন পরে প্রধানমন্ত্রী নতুন এই ঘেষেনা দিলেন। এর আগে গতকাল সকালে স্কটল্যান্ডের ফাস্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজেন সেখানে লকডাউন ঘোষণা করেছেন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাত (এনএইচএস) বড় রকম চাপে পড়েছে। প্রাক্তন স্বাস্থ্য সচিব জেরেমি হান্ট অবিলম্বে দেশজুড়ে লকডাউন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি সব স্কুল-কলেজ এমনকি সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মিউট্যান্ট কোভিড ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাবার ফলে ‘ন্যাশনাল লকডাউন’ ঘোষণার দাবি করছেন বৃটেনের বিরোধী লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, ভাইরাস যখন স্পষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে, তখন কাল বিলম্ব না করে এখনই এই বিধি-নিষেধ আরোপ করা উচিত।

স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করেছেন, করোনা ভাইরাসের মিউট্যান্ট ভার্সন মোকাবেলার জন্য টিয়ার সমূহ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না। টিয়ার-৪ এর সমস্ত বিধি মেনে চলতে জনগণকে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যথাযথ ভাবে তা না মানার কারণে রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে সরকারের মূল ‘কোভিড-ও’ কমিটি গতকাল সকালে বাস্তবতার আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য বৈঠক করেছে।

১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সাবেক উপদেষ্টা নেইল ও’ব্রায়েন সহ কনজার্ভেটিভ দলের বেশ কিছু এমপি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। লন্ডনের চেজ ফার্ম হাসপাতাল সফর শেষে বরিস জনসন নিজেই বলেছেন, দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যার দিকে তাকালে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে কোনো ভিন্নমত থাকতে পারে না। অবশেষে রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধারমন্ত্রী জাতীয় লকডাউন ঘোষণা করেছেন।

নতুন বিধিনিষেধ মোতাবেক ক্যাফে, বার এবং রেস্তোঁরা সমূহে টেকওয়ে পরিবেশন করার অনুমতি দেয়া হবে। তবে তারা কোন প্রকার অ্যালকোহল সরবরাহ করতে পারবেনা। জনসাধারণকে কেবলমাত্র পাঁচটি কারণে ঘরবাড়ি ত্যাগ করার অনুমতি দেয়া হবে। এরমধ্যে রয়েছে, একান্ত প্রয়োজনে কাজ করতে যাওয়া, জরুরী প্রয়োজনে কেনাকাটা করা, মাত্র একজনের সাথে শরীরচর্চা অনুশীলন করা, কারো যত্ন নেয়া ও চিকিত্সা সহায়তা দেয়া। শিশুরা বাবা-মা উভয়কে দেখতে পারবে, যদি তারা আলাদা থাকেন। বিয়ে এবং ফিউনারেল সার্ভিস টিয়ার-৪ অনুযায়ী চলবে। ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারী পূর্বে হলে ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে। আউট ডোর স্পোর্ট ভেন্যু বন্ধ থাকবে, তবে প্লেগ্রাউন্ড চালু রাখা যাবে।

সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অভূতপর্ব চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে চুড়ান্ত পর্যায়ের সোশ্যাল ডিসটেনসিং কার্যকর করতে হবে। ফলে এ্যালার্ট লেবেল ৫ স্তরে উন্নীত করার জন্য সুপারিশ করেছেন। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলস এর চীফ মেডিক্যাল অফিসারদের যৌথসভা থেকে সরকারের প্রতি এই সুপারিশ করা হয়।

জাতীয় লকডাউন বিষয়ে আইন অমান্য করলে ২০০ থেকে ১০হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।