রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডাবল মার্ডার
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের পূর্ব নাখালপাড়ায় দুই বোনকে হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রনি মিয়া। রোববার আদালতে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে রনি মিয়া বলেছেন, সাবেক স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিতে বাসায় গিয়েছিলাম। তখন ইয়াসমিন বাসায় ছিলো না। পরে শ্যালিকা শিমু আক্তারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শিমুৃর গলা চেপে ধরলে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়। লাশ বিছানায় চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়ার সময় ইয়াসমিন বাসায় এসে ঘটনা দেখে ফেলে। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে ঘরে থাকা দা দিয়ে ইয়াসমিনকে কুপিয়ে হত্যা করি।
পুলিশ জানায়, রনি মাদকাসক্ত এবং পেশাদার জুয়াড়ি হওয়ার কারণে চার মাস আগে স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তারপর থেকেই তারা আলাদা হয়ে যায়। গত ১ জানুয়ারি নাখালপাড়ার বাসায় ওঠেন ইয়াসমিন ও তার ছোট বোন শিমু। রনি মগবাজারের একটি রিকশার গ্যারেজে থাকেন। নিহত ইয়াসমিন পোশাককর্মী আর শিমু সম্প্রতি নাবিস্কো এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের বাড়ি নরসিংদীতে। রনির বাড়ি জামালপুরে।
পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, ঘটনার পর স্থানীয়রা রনিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে রনিকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। তিনি হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রনির বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে বাসায় গিয়ে রনি সাবেক স্ত্রীকে না পেয়ে শ্যালিকা শিমুর সঙ্গে কথা বলেন। সংসারে ফিরে যেতে ইয়াসমিনকে বুঝিয়ে বলার জন্য শিমুকে অনুরোধ করেন তিনি। এ সময় শিমু তাকে বলেন, তার বোনের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। তার সংসারে ফিরে যাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিমুর গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। পরে ইয়াসমিন বাসায় ফিরলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর ১টার দিকে পূর্ব নাখালপাড়ার ২৫৩/৩ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় একটি কক্ষে রনি তার স্ত্রীকে দা দিয়ে কোপানোর সময় আশপাশের লোকজন জানালা দিয়ে দেখতে পান। পরে আশপাশের লোকজন সেখানে জড়ো হলে রনি ভেতর দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। দরজা ভেঙে কক্ষে প্রবেশ করেন আশপাশের লোকজন। ঘরে ঢুকে তারা দুই নারীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, রনি রিকশা চালালেও বেশিরভাগ সময় বেকার থাকতেন। জুয়া খেলার পাশাপাশি মাদক সেবনও করেন রনি। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। জুয়া ও মাদকের পথ থেকে সরে না আসায় চার মাস আগে রনিকে তালাক দেন ইয়াসমিন। এতে রনি ক্ষোভ হন।