বিয়ানীবাজারে মুজিববর্ষের উপহার নিয়ে নানা কথা
আর কত অসহায় হলে প্রদীপ পাল’রা ভূমি পাবে?

Published: 11 January 2021

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রদীপ পাল বিয়ানীবাজার পৌরসভার নয়াগ্রামে একটি বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে অসুস্থ স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। বেকার এই অসহায় যুবক বাসা ভাড়া দিতে না পারায় মালিক তাকে পরিবারসহ বাসা থেকে বের করে দিয়ে মালামাল বাসায় বাইরে ফেলে গৃহ তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। প্রদীপ পাল অসুস্থ স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখন দ্বারে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ভূমিহীন প্রদীপ পালের বাড়ী ছিল পৌরসভার খাসা গ্রামে।

মোঃ ওমর আলী, পিতা বাবুল মালকার। সনাতন ধর্ম ত্যাগ করার পর ৩ কন্যা স্ত্রীসহ খাসা দিঘিরপার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকছেন। পৌর এলাকার দাসগ্রামের তাদের বাড়ী ছিল। ধর্ম ত্যাগ করার পর তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেওয়া হয়।
প্রদীপ পাল ও নও মুসলিম ওমর আলী এই দু’জন আবেদন করেছিলেন মুজিববর্ষের উপহার পাওয়ার জন্য। শতভাগ ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বন্টনের খবরে তারা আবেদন করেন বিয়ানীবাজার ভূমি অফিসে। বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়রও তার সার্টিফিকেটে এই দু’জনকে প্রকৃত ভূমিহীন হিসেবে উল্লেখ করে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। আশার আলো দেখছিলেন প্রদীপ পাল ও নও মুসলিম ওমর আলী। একখন্ড ভূমি পেলে তারা স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অন্তত মাথা গুজার ঠাঁই হবে এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা।

কিন্তুু যেদিন প্রদীপ পালের পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে মালিক পক্ষ মালামাল বাইরে ফেলে দেয় ঠিক সে দিনই তিনি জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার তিনি পাচ্ছেন না। চূড়ান্ত তালিকায় নেই তার নাম। প্রদীপ পাল বলেন, আর কি হলে ভূমিহীনদের তালিকায় নাম যাবে আর প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাব।

নও মুসলিম ওমর আলী জানান, ইসলাম গ্রহণের পর আমি ভাড়া বাসায় অবস্থান করছি। আমি অসহায়। আমার জায়গাজমি নেই। প্রকৃত ভূমিহীন হিসেবে মেয়রও আমাকে প্রত্যয়ন করেন। কিন্তু তালিকায় আমার নাম না থাকার খবর শুনে আমি বিয়ানীবাজার উপজেলা ভূমি অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে অফিস আমাকে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। উপজেলায় গিয়েও ইউএনও’র সাথে দেখা করতে পারিনি।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি চিহ্নিত করে গৃহ নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়। সে অনুযায়ী সারা দেশের ন্যায় বিয়ানীবাজার উপজেলার গৃহহীনদের মধ্যে গৃহ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বিভিন্নস্থান থেকে খাস জমিও উদ্ধার করা হয়।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার খাসা এলাকায় খাস জমি উদ্ধার করে প্রশাসন। এখানে প্রকৃত ভূমিহীনদের ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার খবরে ভূমিহীন তালিকায় ঘর বরাদ্দ পেতে স্থানীয়সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন হুমড়ী খেয়ে পড়েন। আবেদন জমা হতে থাকে স্থানীয় ভূমি অফিসে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি গৃহহীনদের ৫০ জনের একটি তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে এবং সেখানে এই তালিকাও অনুমোদন হয়েছে। সাংবাদিকদের হাতে আসা তালিকায় দেখা যায়, মেয়রের প্রত্যয়ন করা এই দুই প্রকৃত ভূমিহীনের নাম নাই। যাদের নাম তালিকায় রয়েছে, তাদের মধ্যে একই পরিবারের ২ জনসহ পৌরসভার বাইরের ইউনিয়নসহ অন্যান্য জেলার নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাচাই বাছাই ছাড়াই প্রকৃত ভূমিহীনদের বাদ দিয়েই পৌরসভার জন্য এই তালিকা অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। তালিকায় ইউএনও অফিসের এক কর্মচারীর মায়ের নামও রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মকসুদুল ইসলাম আওয়াল বলেন, ভূমিহীনদের তালিকা কিভাবে করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ইউএনও এবং এসিল্যান্ড তালিকা তৈরী করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এ রকম একটি তালিকা জেলা প্রশাসকের অফিসে প্রেরণের কথা স্বীকার করলেও তালিকা তৈরিতে অনিয়মের কথা উল্লেখ করতেই তিনি ফোন কেটে দেন।