রানী ভিক্টোরিয়ার সাম্রাজ্য- শেষ পর্ব
বিশ্বযুদ্ধ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন
হিস্ট্রি এক্সট্রা ।।
আফ্রিকা মহাদেশ সোনা এবং হিরেসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কাঁচামালে সমৃদ্ধ ছিল। সেসব উত্তোলন সুবিধার বিনিময়ে মহাদেশটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাকী অংশগুলোর মতো ব্রিটিশ উৎপাদিত পণ্যগুলোর জন্য বিশাল বাজার তৈরি করে দিয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসার কথায় আফ্রিকান জনপদগুলোর বেশিরভাগই সম্মত ছিল না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ভারতীয় বিদ্রোহ বা নিউ জিল্যান্ডের প্রথম তারানাকি যুদ্ধ (১৮৬০-৬১), বা ১৮৬৫ সালের জ্যামাইকার মরান্ট বে বিদ্রোহ, ধারাবাহিক বিদ্রোহগুলো এক সময় ভিক্টোরিয়ান যুগের ধারাতে পরিণত হয়। ফলে রানী ভিক্টোরিয়ার দীর্ঘ রাজত্বকালের শিখরে যখন বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ ভূখন্ড ব্রিটিশ রাজের অধীনে ছিল, তখন থেকেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য তার গোধূলি লগ্নে প্রবেশ করে। আফ্রিকা, এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাম্রাজ্যটির বিংশ শতাব্দীর বিস্তারের ১১টি মূল ঘটনা এখানে রয়েছে।
১৮০২ সিলোনকে (শ্রীলঙ্কা) একটি ব্রিটিশ কলোনী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৮০৮ সালে সিয়েরালিওন ব্রিটিশ কলোনীভুক্ত হয়। ১৮১৩ সালে মাল্টা এবং গোজোর দ্বীপগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত করা হয়। ১৮৩১ ব্রিটিশ গায়ানার কলোনী গঠিত হয়। ১৮৪১ সালে গঠিত হয় নিউ জিল্যান্ডের উপনিবেশ। ১৮৪৩ সালে হংকং ব্রিটিশ কলোনীতে পরিণত হয়। ১৮৪৯ সালে ভারতের পাঞ্জাবকে সংযুক্ত করা হয়, ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ ব্রিটিশ কলোনীতে পরিণত হয়। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরকারি কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। ১৮৬৭-তে কানাডা নামে নতুন জাতি গঠনের জন্য তিনটি প্রাক্তন উপনিবেশকে (নিউ ব্রান্সউইক, নোভা স্কশা এবং কানাডা) একীভ‚ত করা হয়। ১৮৭৪-তে ফিজি একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়।
১৮৭৭-এ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের জন্য ব্রিটিশ হাই-কমিশন তৈরি করা হয়। ১৮৭৮-এ সাইপ্রাস ব্রিটিশদের দখল চলে যায়। ১৮৮১ থেকে ১৯১৯ সালে ব্রিটেন আফ্রিকার কায়রো থেকে কেপটাউন পর্যন্ত অঞ্চলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ১৮৮৭ সালে ২ হাজার প্রবাল দ্বীপের দেশ মালদ্বীপকে ব্রিটিশ নিরাপত্তার অধীনে নেয়া হয়। ১৮৮৯-এ ব্রæনেই একটি ব্রিটিশ সুরক্ষিত অঞ্চলে পরিণত হয় এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো একটি যৌথ উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৮৯২ সালে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৮৯৬-তে মালয় (মালয়শিয়া) গঠিত হয়। ১৮৯৯ কুয়েত ব্রিটিশ সুরক্ষিত অঞ্চলে পরিণত হয়। ১৯০১ সালে কুইন্সল্যান্ড, নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, তাসমানিয়া, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি পৃথক ব্রিটিশ স্ব-শাসিত কলোনী অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ গঠন করে। বহ দশক ধরে বিটিশ শাসনের প্রতি আনুগত্য ধরে রাখা বেশ কয়েকটি উপনিবেশ, যেগুলো তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিল, তাদের আধা-স্বতন্ত্র করে ডমিনিয়ন মর্যাদায় ভ‚ষিত করা হয়। ১৮৬৭ সালে কানাডা তাদের মধ্যে প্রথম, তারপর ১৯০১ সালে অস্ট্রেলিয়া ডমিনিয়ন মর্যাদা পায়।
তবে, অবশ্যই প্রথম দিকে কানাডার ক্ষেত্রে এটি শুধু নতুন উপাধিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। লন্ডন কানাডার আইনসভা, কার্যনির্বাহী এবং বিচার বিভাগীয় শাখা জুড়ে নেয়া সিদ্ধান্তকে অতিক্রম করার অধিকার ধরে রাখে। ভিক্টোরিয়ান যুগে আধিপত্যের শীর্ষে অবস্থান করার পর, বিংশ শতাব্দীতে দু’টি বিশ্বযুদ্ধের ব্যয়ে ব্রিটিশ অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য পতন ঘটার মাধ্যমে সাম্রাজ্যটি আবার সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। অনেক উপনিবেশ, সুরক্ষিত অঞ্চল এবং ডমিনিয়ন ন্যাশনাল সেল্ফ ডিটারমিনেশন বা জাতীয়তার সংকল্প কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর দশ বছর পর ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, গানাও নিজেকে উপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে নেয়। তারপর ব্রিটেনের বাকী আফ্রিকান উপনিবেশগুলো একই পথ অনুসরণ করে। ১৯৬০, ’৭০ এবং ’৮০-র দশকে, আটলান্টিক জুড়ে ব্রিটিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজও লন্ডনের প্রত্যক্ষ শাসন থেকে নিজেকে মুক্তি করে নেয়।