পতাকা বৈঠকে বিএসএফ’র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিজিবি
গজুকাঁটায় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি লঙ্ঘন করে বিএসএফ’র বাঙ্কার খনন
এম.হাসানুল হক উজ্জ্বল, গজুকাটা সীমান্ত এলাকা থেকে ফিরে :
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার গজুকাটা সীমান্ত এলাকার উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতির কোন সমাধান হয়নি। মঙ্গলবার কমান্ডিং অফিসার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে বিএসএফ পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার লক্ষ্যে ২’শ বছরের পুরনো জামে মসজিদের পাশে নির্মানাধীন নতুন ভবনের স্ট্রাকচার ভেঙ্গে ফেলার জন্য বিজিবি’কে চাপ প্রয়োগ করে। বিজিবি মুজিব ইন্দিরা চুক্তি স্মরণ করিয়ে জিরো লাইনের ২০ গজের মধ্য থেকে বিএসএফকে বাঙ্কার সরিয়ে নিতে অনুরোধ করে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মত বিরোধ বাড়তে থাকলে অমীমাংসিত অবস্থায় বৈঠক শেষ হয়। সীমান্তের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার বলেছেন, আরো পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে শীঘ্রই এর সমাধান হবে।
মঙ্গলবার সরেজমিন গজুকাটা সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি লঙ্ঘন করে বিএসএফ সীমান্ত পিলারের ২০ গজের মধ্যে বাঙ্কার খনন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে। বিএসএফ জওয়ানরা সীমান্ত পিলারের নিকটে এসে বারবার মসজিদে কাজ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করছে। কিছু সময় পর পর তারা মসজিদটির ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ভারতের আগ্রাসী ভূমিকার জবাব দিতে বিজিবিও তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। গজুকাটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে এলাকা ছেড়ে নিরাপদে অবস্থানে চলে গেছেন।
এলাকাবাসী জানান, ১৮২০ সালের পুরনো এই মসজিদ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এলাকাবাসী। গেল সপ্তাহে প্রবাসীদের অর্থায়নে এই মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হলে তাতে বাঁধা প্রদান করে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। আর এরপর থেকে মসজিদটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল মো: শাহ আলম সিদ্দিকী মঙ্গলবার সকালে গজুকাটা সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন। এদিকে বিকেল ৫ টায় বিজিবি এবং বিএসএফ’র কমান্ডিং অফিসার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক শেওলা সুতারকান্দি আইসিপিতে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিজিবি ৫২’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন লেফটেনেন্ট কর্নেল মো: শাহ আলম সিদ্দিকী এবং বিএসএফ-৭ এর কমান্ডিং অফিসার বিএস মিনহাজ। এ প্রসঙ্গে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্নেল মো: শাহ আলম সিদ্দিকী জানান, ভারতের আগ্রাসী ভ‚মিকার প্রতিবাদ জানিয়ে জিরো লাইনের ২০ গজের মধ্য থেকে বাঙ্কার সরিয়ে নিতে ভারতীয় বাহিনীকে অনুরোধ করেন। বিএসএফ এ সময় অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য তুলে ধরলে বৈঠকে কোন ইতিবাচক দিক খুঁজে না পাওয়ায় তা অমীমাংসিত অবস্থায় মুলতবি হয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন ভারতীয় বাহিনীর শুভবুদ্ধির উদয় হবে আর এর মাধ্যমে এর সুষ্ঠু সমাধান হবে।
এদিকে রাত ৮ টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দু’পক্ষের পতাকা বৈঠকে বিষয়টির কোন রকমের মীমাংসা না হওয়ায় সীমান্ত এলাকার পিলার ঘেষা বাঙ্কার গুলোতে বিএসএফ শক্তি বৃদ্ধি করে কড়া পাহারা দিচ্ছে। বিজিবিও তাদের অবস্থানে থেকে সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে।