প্রেমের টানে রং বদল
করিমগঞ্জে দেখা গেল আন্দামানের বিরল হলুদ ব্যাঙ

Published: 16 May 2021

অরুপ রায়, করিমগঞ্জ (ভারত) ১৬ মে :


করিমগঞ্জে দেখা গেল বিরল প্রজাতির হলুদ রঙের ব্যাঙ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন নয়াগ্রাম গিরিশগঞ্জ বাজার এলাকায় একটি ডোবায় হঠাৎ করেই অনেকগুলো হলুদ রঙের ব্যাংক চোখে পড়েছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি ‘ইন্ডিয়ান বুলফ্রগ’ নামে পরিচিত, যারা মূলত আন্দামানের। তবে বরাক উপত্যকায় এর আগে প্রকাশ্যে এধরনের প্রজাতি চোখে পড়েনি। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এর কিছু ফটো আপলোড হওয়ায় এবং বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। এবার বন বিভাগের তরফে এই বিরল প্রজাতিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে এলাকার মানুষ একটি ডোবায় হঠাৎ করেই শ’খানেক হলুদ রঙের ব্যাঙ দেখতে পান। বৃষ্টিতে ডোবা পরিষ্কার জলে ভরে গেছে এবং এতেই খেলা করছে তারা। বেশ বড় আকারের ব্যাঙগুলো সাধারণ বরাক উপত্যকার ব্যাঙ থেকে আলাদা। এতেই কৌতুহল জন্মে এবং অনেকেই এর ফটো তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন। একেবারে প্রত্যন্ত এলাকার এই ফটোগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে এবং অনেকেই জানতে চান ঠিক কোথায় ব্যাঙগুলো দেখা যাচ্ছে।

বন বিভাগের তরফে শনিবার এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং জনগণের উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, কৌতুহলবশে কেউ যেন এদের ক্ষতি করে না বসেন। বিভাগের রেঞ্জ অফিসার শামস উদ্দিন বড়ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা চাইনা জনগণ খুব একটা বেশি এলাকায় জড়ো হোন। এই প্রাণীদের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে মানুষ শেষে তাদের ক্ষতি করবেন, যেটা একেবারেই কাম্য নয়। অনেকেই হয়তো এগুলোকে ধরে একুরিয়ামে রাখার চেষ্টা করবেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক হবে। আমরাও চাই না প্রাকৃতিক জায়গা থেকে সরিয়ে এদের কোনও অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে। প্রত্যেকের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা এই প্রাণীদের স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে দিন।’

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বরিষ্ঠ পরিবেশবিদ পার্থঙ্কর চৌধুরী জানিয়েছেন, এই প্রজাতির নাম হচ্ছে ‘ইন্ডিয়ান বুলফ্রগ’, এরা মূলত আন্দামানের প্রজাতি। এদের নিয়ে এখনও গবেষণা অনেক কম হয়েছে, তবে যেটুকু জানা গেছে সেটা হচ্ছে এরা ক্ষতিকারক নয় এবং বিষাক্ত নয়। একেবারে বড় হয়ে গেলে এদের শরীরে আরও বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। পুরুষ ব্যাঙ সঙ্গমের জন্য স্ত্রী ব্যাঙদের আকৃষ্ট করতে রং পাল্টায়। এই প্রজাতি বরাক উপত্যকায় কোথা থেকে এসেছে এর কোনও গবেষণা এখনো হয়নি, তবে যেহেতু এই মাটিতে অনেকগুলো ব্যাঙ একসঙ্গে পাওয়া গেছে ফলে তারা হয়তো এখানেই বহুদিন ধরে থাকছে। তারা যেভাবেই বরাকে এসে থাকুক, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এদের সুরক্ষা দেওয়া এবং স্বাচ্ছন্দে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া।’

বিভিন্ন গবেষণা বলছে ইন্ডিয়ান বুলফ্রগ প্রজাতির ব্যাঙ প্রথমে আন্দামানে দেখা গেছিল তবে পরবর্তীতে মায়ানমার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং নেপালেও দেখা গেছে। এরা মূলত নিশাচর প্রাণী এবং পরিষ্কার জলে বাঁচতে চায়।

জলের ছোট ছোট পোকামাকড়, মাছ এমনকি ছোট ছোট সাপের বাচ্চা খেয়ে বেঁচে থাকে এরা। জল এই এদের বংশ বৃদ্ধি এবং বসবাস হলেও সামুদ্রিক বা নদীর স্রোতের এলাকায় এরা যায় না। পরিষ্কার জমা জলে থাকতে পছন্দ করে। যেহেতু এদের নিয়ে খুব একটা গবেষণা হয়নি ফলে আইইউএনসি এদের ‘লিস্ট কনসার্নড্’ পর্যায়ে রেখেছে অর্থাৎ এদের নিয়ে গবেষণার উৎসাহ কম। তবে বরাক উপত্যকায় এবার এই প্রজাতির চোখে পড়ায় হয়তো আগামীতে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রী এদের নিয়ে গবেষণার কথা ভাববেন।