টিকার দাম প্রকাশ বিব্রত চীন

Published: 3 June 2021

পোস্ট ডেস্ক :


সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কেনার প্রস্তাব চীনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তাবের সঙ্গে ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তির কাগজও পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সিনোফার্মের টিকা কেনার অনুমোদন দেয় ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এরপরই ক্রয় চুক্তির কাগজ পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক ছিল। তবে বিপত্তি ঘটে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর একটি ব্রিফিং নিয়ে। ওই ব্রিফিং এ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার চীনা টিকার মূল্য প্রকাশ করে দেন সাংবাদিকদের সামনে। পরে তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
টিকা আনতে চীনের সঙ্গে করা খসড়া চুক্তিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষার কথা বলা ছিল। সে অনুযায়ি টিকার দামসহ কিছু বিষয় প্রকাশ করার সুযোগ নেই। ওই ব্রিফিং এ সরকারি কর্মকর্তা টিকার দাম প্রকাশ করে দেয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ঘটনার পর ড. শাহিদা আকতারকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। গত মঙ্গলবার তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওই কর্মকর্তা কেন টিকার দাম প্রকাশ করতে গেলেন তার তদন্ত হওয়া উচিত। তার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি জানার কথা।

ওদিকে টিকার দাম প্রকাশ করে দেয়ায় চীনা কর্তৃপক্ষও বিপাকে পড়েছে। তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই টিকা রপ্তানি করছে। অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দামে টিকা নিচ্ছে। এখন ওইসব দেশে টিকার দাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগে কড়া ভাষায় চিঠি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গোপনীয় বিষয় কেন প্রকাশ করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে তারা বলেছে, ব্যবসায়িক নীতির কারণে তারা একেক দেশের কাছে একেক দামে টিকা বিক্রি করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারণে বিশেষ মূল্যে টিকা সরবরাহ করতে চেয়েছে। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় অপর দেশগুলো খুব খারাপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিনোফার্ম। একটি অপ্রকাশযোগ্য চুক্তির বিষয় কীভাবে প্রকাশ পেলো সে কথাও জানতে চেয়েছে চীন।

চীনের তরফে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। অবশ্য চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানাতে পারেননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষের ওই চিঠির জবাব এখনও দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হকের কক্ষে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জুন-জুলাই ও আগস্টের শেষ দিকে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আনার জন্য চীনের কাছে ক্রয় প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। চীনের চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ বা সিনোফার্ম থেকে এই দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার কথা। বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় প্রথম চালানে সিনোফার্মের ৫০ লাখ টিকা জুনে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। তিন মাসে সিনোফার্মের কাছ থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কিনতে দুই পক্ষ তিনটি চুক্তি সইয়ের জন্য খসড়া তৈরি করা হয়। ক্রয় প্রস্তাবসহ চুক্তির কাগজ গত সপ্তাহে চীনের কাছে পাঠানো হয়।

গত বৃহস্পতিবার চীন থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ই মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা এক কোটি টিকা কেনার ব্যবস্থা করেছি। শিগগিরই দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। তার ধারাবাহিকতায় চীনের সিনোফার্ম থেকে টিকা কেনার বিষয়টি গত ১৯শে মে অনুষ্ঠিত অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন হয়।