লেজার রশ্মিতে বিমান পরিচালনায় বিঘ্ন
পোস্ট ডেস্ক :
কেবল উড্ডয়ন করেছে বিমানটি। এরমধ্যেই ঘটে ঘটনা। হঠাৎ কোথা থেকে পাইলটের চোখে এসে পড়ে লেজার বিমের রশ্মি। রশ্মির তীব্রতায় যন্ত্রণা শুরু হয় পাইলটের চোখে। আকাশে আর বেশিক্ষণ থাকেনি বিমানটি। বাধ্য হয়েই অবতরণ করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছিল লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। হিথরোর মতো বিমানের ফ্লাইট বাতিলের মতো কোনো ঘটনা না ঘটলেও লেজার রশ্মির শিকার হচ্ছে হযরত শাহ্জালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করা বিমানগুলো।
বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বিমান পরিচালনায়। দীর্ঘদিন ধরে ককপিট ফ্লাইট লকের মন্তব্যে এ রকম অনেক অভিযোগ জমা হলেও কার্যত কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে। অনুরোধ করা হয়েছে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
সূত্রে জানা গেছে, লেজার বা উত্তেজিত বিকিরণের সাহায্যে আলোক বিবর্ধন (লাইট এমপ্লিকেশন বাই স্টিমুলেটেড ইমিশন রেডিয়েশন) অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বৈমানিকরা মনে করছেন। দীর্ঘদিন থেকেই ঢাকা এবং চট্টগ্রামে এ রকম ঘটনা ঘটছে। নিচ থেকে কেউ লেজার দিয়ে লাইট শো করছেন। তাক করছেন বিমান বরাবর। লেজার বিম করার কারণে বিমান পরিচালনা করায় বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষ করে পাইলটের চোখে আলোক রশ্মি পড়ার কারণে এমনটি ঘটছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমান সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামে লেজার বিম করা হচ্ছে। ঢাকার নিকুঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার এলাকায় এটি ব্যবহারের ফলে বিঘ্ন ঘটছে পাইলটদের বিমান পরিচালনায়। লেজার যদি বিমানের ককপিটে পাইলটের চোখে পড়ে এবং লং বিম করা হয় তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এই বিমগুলো যারা করছেন তারা হয়তো জানেন না এর ফলে কী ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় লেজার দিয়ে লাইট শো খুবই জনপ্রিয়। লেজারের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। সুপার মার্কেটে বারকোড পড়া থেকে শুরু করে এই আলোর রশ্মি দিয়ে ডাক্তাররা অস্ত্রোপচার করেন। এই রশ্মি দিয়ে নানা বস্তু কেটে ফেলা যায়। সেনাবাহিনী কোনো টার্গেট নির্ধারণে লেজার ব্যবহার করে। একইভাবে বিনোদনে লেজার লাইট শো’র ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশু-কিশোররা খেলা হিসেবে এটি ব্যবহার করে থাকে। অনেকে লেজার তাক করে মজা করলেও হটাৎ চোখে এসে পড়লে তা যন্ত্রণার কারণও হতে পারে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিতভাবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন)’র পক্ষে গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুনিম খান মজলিস। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্যতম কিউ পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন দেশি-বিদেশিসহ ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার যাত্রী আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে যাতায়াত করেন। বিমানবন্দরের রানওয়ের ১৪ এবং ৩২ এর অ্যাপ্রোচ এলাকায় (উত্তরা, নিকুঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার) বিমান ওঠা-নামার সময় বৈমানিকদের চোখে (ককপিটে) লেজার রশ্মি ফেলছে। এর ফলে বৈমানিকদের চোখের দৃষ্টি সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়। বৈমানিকগণ লেজার রশ্মির তীব্র আলোকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখিন হচ্ছেন।
বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় করে শুক্রবার স্থানীয় মসজিদ সমূহে লেজারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবহিত করার অনুরোধ করা হয় এতে। এতে উত্তরা, নিকুঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে রানওয়ের ১৪ ও ৩২, উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় সকল বৈমানিকদের লেজার রশ্মির উপর অতিরিক্ত সর্তকতামূলক ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় এতে।
এ বিষয়ে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকে এ রকম অনেক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হলেও যারা বিম করছেন তাদের শনাক্ত করা দুষ্কর। এজন্য সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ডিশ সংযোগের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।