করোনায় সহকর্মীদের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণের দাবিতে লড়ছেন ভারতের পাইলটরা

Published: 15 June 2021

পোস্ট ডেস্ক :


ভারতের একজন পাইলট। বাণিজ্যিক একটি ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়িয়ে করোনায় বিপর্যস্ত ভারতে এসে পৌঁছেছেন। এমন সময় খবর পেলেন তার এক সহকর্মী করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন। তিনি বলেন, দিল্লিতে বিমান পার্ক করলাম। ইঞ্জিন বন্ধ করলাম। মোবাইল ফোনের সুইচ অন করলাম। আমার পাশের একজন বললেন, হায় ঈশ্বর, এত মানুষ মারা গেছেন! এ খবর শুনে মনে হলো আমি পড়ে গেলাম। কয়েক মিনিট সিটের ওপর বসে রইলাম।
ওই পাইলট বললেন, করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ে মে মাসে ভারতে ৫ জন পাইলট মারা গেছেন। ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় মধ্য মার্চে এবং তা পিক-এ পৌঁছে মে মাসে। এ সময়ে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন কয়েক লাখ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। মানুষ অক্সিজেন ও বেডের জন্য হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মারা যায়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।

এর ফলে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল শিল্পেও বড় আঘাত লাগে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন পাইলট ও বিমান ক্রুরা। কিন্তু তাদের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদেরকে টিকা দেয়া হয়নি। এ কারণে অনেকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এক ডজনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন এ শিল্পের। সারা ভারতের বিভিন্ন বিমান সংস্থার কমপক্ষে ৫০০০ পাইলটের জাতীয় সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাইলটস এপ্রিলের শুরুতে সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন ঝুঁকি মোকাবিলা করছেন আমাদের সহকর্মীদের বেশির ভাগ। এক্ষেত্রে কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি।

৮ই জুন একই ফেডারেশন মুম্বই হাই কোর্টে একটি আবেদন করে। তাতে অধিকতর ইন্স্যুরেন্স সুবিধা, পাইলট ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। এতে বলা হয়, মহামারির সময়ে এক অস্বস্তিকর পরিবেশে পাইলট, কেবিন ক্রু এবং বিমানের অন্য স্টাফরা দায়িত্ব পালন করছেন। এখন তাদের দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ভারত সরকার আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধারে তৎপর হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে। এসব কাজের জন্য সরকারকে সবচেয়ে বেশি ভর করতে হয়েছে পাইলটদের ওপর। গত বছর এপ্রিলে যখন প্রথম দফা করোনা আঘাত হানে এবং সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে, তখন বিভিন্ন স্থান থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে যুক্ত করা হয় বেশ কিছু বিমান সংস্থাকে। এ উদ্যোগে সামনে থেকেছে এয়ার ইন্ডিয়া। পরে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলোকে।

বাণিজ্যিক ফ্লাইটের একজন পাইলট বলেছেন, তিনি এবং তার সহকর্মীরা ওইসব ফ্লাইটে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তা করা হলে অর্থনীতিতে যে বিশাল ধাক্কা লেগেছে এবং অর্থনীতি যে অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে সে বিষয়ে তারা জানতেন। জানতেন কাজে না গেলে বেতন দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা জানতাম না আমাদের বেতন কি হবে। কখন পরের বেতন পাব। তার কথায় বেতন দেয়া হয় মাসিক ভিত্তিতে। কিন্তু মহামারিকালে কোম্পানি তাদের বেতন প্রতি ফ্লাইটের জন্য পরিশোধ করা শুরু করে। ফলে করোনাকালে ফ্লাইট কমে যায়। এর অর্থ হলো পাইলটদের আয়ও কমে যায়, কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত।

এ শিল্পে জড়িত পাইলটদের বেতন ভয়ঙ্করভাবে কর্তন শুরু হয় ২০২০ সালের শুরু থেকে। বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে গত নভেম্বরে ইন্ডিয়ান কমার্শিয়াল পাইলটস এসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান পাইলটস গিল্ড একটি আবেদন করে। তাতে বলা হয়, এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের বেতন কর্তন করা হয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ পর্যন্ত। পক্ষান্তরে অন্য বিমান সংস্থায় তা মাত্র শতকরা ১০ ভাগ পর্যন্ত। গত জুলাইতে এয়ার ইন্ডিয়া এক টুইটে বলেছে, তারা কোনো ক্যাটেগরির কর্মচারীদের বেসিক বেতন বা এলাউন্স কর্তন করেনি। তবে তারা স্বীকার করে নেয় যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাতা বা এলাউন্স র‌্যাশনালাইজেশন করা হয়েছে বিমান সংস্থার কঠিন আর্থিক অবস্থার কারণে। পাইলট এবং ক্রুদেরকে কত ঘন্টা আকাশে উড্ডয়ন করেন তার ওপর ভিত্তি করে তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। এমন সিদ্ধান্তে পাইলটদের ইউনিয়নে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা বলে যে, আমাদের বেতন নিয়ে এবং বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে অর্ধসত্য কথা বলে বিভ্রান্ত করছে।

উল্লেখ্য, কমপক্ষে দুই ডজন দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরাতে এয়ার ইন্ডিয়ার প্রায় ২০০০ ব্যক্তি অংশ নেন ফ্লাইটে। তাদের মধ্যে প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজনের কারোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। কমপক্ষে ৫০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, জরুরি ওষুধপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরবরাহে সহায়তা করেছেন পাইলটরা। ফেডারেশন বলেছে, এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে কমপক্ষে ১৩ জন পাইলট করোনায় মারা গেছেন।