সিলেটের নতুন কারাগারে প্রথম ফাঁসি কার্যকর

Published: 18 June 2021

সিলেট অফিস :

স্ত্রী সাহিদা আক্তারকে হত্যার দায়ে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (৫৫) নামের এক বন্দীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। গতকাল রাত ১১ টায় শহরতলীর বাদাঘাটে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে এই ফাঁসি কার্যকর হয়। নতুন এই কারাগার নির্মাণের পর এটিই প্রথম ফাঁসি। ফাঁসি কার্যকর হওয়া বন্দি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজনগর কবরস্থান এলাকার মৃত আবুল হোসেনের পুত্র। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন রাত পৌনে ১টায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দন্ড কার্যকর হওয়ার পরে তার লাশ স্বজনরা রাতেই দাফনের জন্য হবিগঞ্জে নিয়ে গেছেন। তার তিন মেয়ে রয়েছে। তারা তাদের মামা বাড়িতেই লালিত-পালিত হন।

জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ তার দন্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করেন। সকল প্রক্রিয়া শেষে গতকাল তাকে রায় কার্যকরের বিষয়টি জানানো হয়। বিকেলে তার ভাই এসে শেষ দেখা করেন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা হাবিবুর রহমান তাকে তাওবা ও কালেমা পাঠ করান। রাত ১১ টায় বহুল আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান আসামি সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন। এসময় সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম, সিলেটের ডিআইজি প্রিজনস মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল, সিলেটের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, জেল সুপার মো. মুজিবুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জল্লাদ শাহজাহান ইতোপূর্বে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দন্ডিত বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের ফাঁসি কার্যকর করে দেশব্যাপী আলোচিত হন।

জানা গেছে, ২০০৪ সালের ৭ মার্চ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ তিন কন্যা সন্তানের জননী তার স্ত্রী সাহিদা আক্তার ওরফে সাইদাকে শাবল ও ছুরি দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ০৫। তারিখ ০৭/০৩/২০০৪। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায়ে সিলেটের তৎকালিন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক তার ফাঁসির আদেশ দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামি সিরাজ হাইকোর্টে আপিল (আপিল নম্বর ১৫৮/২০০৭, ডেথ রেফারেন্স নম্বর ১৮/০৭) করেন। হাইকোর্ট ২০১২ সালের ১ আগস্ট আপিলের রায় ঘোষণা করেন। উচ্চ আদালত নিম্ম আদালতের ফাঁসির রায়টি বহাল রাখেন। এরপর আসামি সিরাজ রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, কারা-২ শাখা এর স্মারক নম্বর ৫৮.০০.০০০০.০৮৫.২৭.০৮২.২০২১-৩৮৮, তারিখ ২৫/০৫/২০২১ -এ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রাণভিক্ষার আবেদন না মঞ্জুর করা হয়। এরপরই সকল প্রক্রিয়া শেষে গতরাত ১১ টায় ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে দন্ড কার্যকর করা হয় স্ত্রী হত্যার আসামি সিরাজুল ইসলামের। ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষে কারাগার ও এর আশপাশ এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের প্রায় আড়াই বছর পর এটিই হল নতুন এই কারাগারের প্রথম ফাঁসি।

জানা গেছে, প্রায় দুই হাজার বন্দির ধারণ ক্ষমতার এই কারাগারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।