টনক নড়েছে জেলা পরিষদের, চারখাইয়ে সেই ভূমি’র লীজ বাতিল হচ্ছে

Published: 29 June 2021

।। এম.হাসানুল হক উজ্জ্বল ।।


বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতর জেলা পরিষদের ভূমি অবশেষে পাচ্ছেন না কতিথ লিজ গ্রহিতারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও চারখাইবাসীর কড়া প্রতিবাদের পর জেলা পরিষদ কতিপয় ব্যক্তির নামে দেওয়া লীজ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 

সূত্রটি জানায়, সিলেট জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের কাছে চারখাই ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা বিদ্যালয়ের দখলীয় ও জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ভূমি লীজ গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জোর প্রতিবাদ করলেও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে ব্যক্তির নামে লীজ প্রদান করে এবং গত ২২ জুন লীজ গ্রহীতাদের মধ্যে দখল বুঝিয়ে দিতে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ চারখাই উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় এলাকার লোকজন এর প্রতিবাদ জানালে তাতে কর্ণপাত না করে জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্টরা দখল বুঝিয়ে দিতে তাদের তৎপরতা চালাতে থাকে। খবর পেয়ে চারখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমদ আলী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাতীয় বিশ^ বিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিষ্টার অধ্যাপক আব্দুল খালিক, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাসহ এলাকাবাসী জড়ো হয়ে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এর প্রতিবাদ জানান। এ সময় তারা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে চেষ্ঠা করেন জেলা পরিষদের মালিকানাধীন জমিটি হলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তা যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছেন।

 

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল খালিক জানান, লীজ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরুর খবর শুনে জমিটি বিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিদ্যালয়ের জন্য লীজ প্রদানের আবেদন জানান তারা। তিনি জানান, সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও বিদ্যালয়ের কাছে জমি লীজ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যক্তির নামে লীজ প্রদান করে।

 

তিনি বলেন, দখল সমঝিয়ে দেওয়ার খবরে আমরা বিদ্যালয়ে যাই এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলি। তাদেরকে বলি আমরা এক জায়গায় বসে আলাপ আলোচনা করি এবং এও বুঝাই যে যাদের লীজ প্রদান করা হয়েছে তারা বিদ্যালয়ের গেইট ব্যবহার ছাড়া অন্য কোন রাস্তা দিয়ে ওই জায়গায় যাওয়া কিংবা ভোগ দখলের সুযোগ নেই। কিন্তুু জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে চলে যায় এবং বিয়ানীবাজার থানায় গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
চারখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমদ আলী জানান, আমি এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে দখল সমঝিয়ে না দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলি। কিন্তু জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ আমাকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

 

এদিকে মামলার সংবাদ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেন এবং শনিবার চারখাই বাজারে মানববন্ধন করে এর প্রতিবাদ জানান এবং ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। অপরদিকে বিষয়টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি’র সাথে যোগাযোগ করা হয়। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন।

 

এদিকে রোববার জেলা পরিষদের সভায় বিষয়টি গুরুত্ব পায়। জেলা পরিষদের একজন সদস্য জানান, এ নিয়ে অনেকেই কথা বলেন এবং বিষয়টির সুরাহার দাবী করেন। জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল হোসেন জানান, তিনি এ নিয়ে কড়া প্রতিবাদ করেন এবং লীজ বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে নমনীয় হয়ে আসছে। বিদ্যালয়কে কীভাবে লীজ প্রদান করা যায় এবং লীজ বাতিলের প্রক্রিয়া কীভাবে করা যায় সে বিষয়টি মাথায় নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে এ নিয়ে কথা বলার চেষ্ঠা করেও জেলা পরিষদের দায়িত্বশীলদের কথা বলা সম্ভব হয়নি।