সৃজিতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তসলিমা

Published: 30 June 2021

পোস্ট ডেস্ক :


সম্প্রতি ওয়েব প্ল্যাটফর্মে চলছে কলকাতার খ্যাতিমান পরিচালক সৃজিত মুখার্জীর ‘রে’। কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের চারটি ছোটগল্পকে আধুনিক রূপ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৪ পর্বের এই ওয়েব সিরিজ। কেউ বলছেন, সৃজিত গল্পগুলোকে নষ্ট করেছেন। কেউ বলছেন, চরম বিরক্তিকর। আবার কেউ ভূয়সী প্রশংসা করছেন। নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন হলেন সেই প্রশংসাকারীদের দলে।

গতকাল মঙ্গলবার তসলিমা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘সত্যজিৎ রায়ের গল্পের ওপর ভিত্তি করে চারটে ছোট ছোট ছবি দেখাচ্ছে নেটফ্লিক্স, শুনেছি, কিন্তু সত্যি বলতে কী, দেখার তেমন ইচ্ছে ছিল না , কারণ দেখলে ভালো লাগবে এমন বিশ্বাস ছিল না। আঁতেলদের নিন্দে শুনেই দেখার ইচ্ছে জাগলো। দেখে তো রীতিমত মুগ্ধ আমি। কয়েক- দশক- পুরোনো গল্পের এমন অবিশ্বাস্য আধুনিকীকরণ করতে সাহস তো দরকারই, কল্পনাশক্তি আর শিল্পবোধও প্রচণ্ড দরকার। ছক ভাঙা সোজা ব্যাপার নয়। তুখোড় শিল্পী হলেই পারেন। সত্যজিৎ রায়কে বয়স্ক আঁতেলদের বুকপকেট থেকে বের করে এনে পুরো ভারতবর্ষের, এমনকী পুরো বিশ্বের নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিলেন ওঁরা। অভিষেক চৌবে চমৎকার, ভাসান বালাও ভালো। আর আমাদের সৃজিত মুখার্জি যত ছবি বানিয়েছেন, মনে তো হচ্ছে তাঁর এ দুটো সবার সেরা।’

আজ বুধবার তসলিমা আবারও লিখেছেন, ‘আমার এই এক বদ অভ্যেস, কাউকে যদি দেখি স্মার্ট, খুব জ্ঞানী এবং গুণী, চরম আধুনিক, ফিজিক্স জানেন, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড জানেন, জানেন আবার কী, রীতিমত বিজ্ঞানী, বড় ডাক্তার, বড় ইঞ্জিনিয়ার, মহাকাশচারী, সার্নে কাজ করেন, ইতিহাস বিজ্ঞান একেবারে ঠোঁটস্থ, বড় মাপের শিল্পী, সাহিত্যিক — আমি আপনাতেই ভেবে বসি তাঁরা আল্লাহ ভগবান ঈশ্বর ইত্যাদি জিনিসে বিশ্বাস করেন না, ধর্ম তাঁদের কাছে রূপকথা ছাড়া কিছু নয়।’

‘মাঝে মাঝে অবশ্য হোঁচট খাই। যখন দেখি রকেটবিজ্ঞানী খেলনা-রকেট হাতে নিয়ে মন্দিরে যান পুজো দিতে যেন আসল রকেট উৎক্ষেপণে দুর্ঘটনা না ঘটে, যখন জটিল ব্রেইন সার্জারি করার আগে মসজিদে গিয়ে অলৌকিকের উদ্দেশে কপাল ঠেকান বড় ডাক্তারেরা, যখন বিরাট কোনও শিল্পী তাঁর প্রদর্শনী শুরু হওয়ার আগে গলায় ঝুলিয়ে রাখা ক্রুশবিদ্ধ যীশুতে চুম্বন করেন। হ্যাঁ বিস্মিতই হই।’

‘কাল রাতে সৃজিত মুখার্জির ফরগেট মি নট দেখে তাঁকে চূড়ান্ত স্মার্ট বলে রায় দিয়েছি, স্মার্ট মানেই তো আমার চোখে লৌকিকে বিশ্বাসী, অলৌকিকে নয়। কিন্তু বললাম না বার বার আমি হোঁচট খাই! চোখে পড়লো তাঁর একখানা ফেসবুক পোস্ট, তাঁর নতুন ছবির মহরতে ভগবানের মূর্তি, আর তার পাদদেশে কলা, নারকেল, ফুল টুলের পুজো। ঈশ্বর বিশ্বাসীরাও ট্যালেন্টেড হতে পারেন, তা আমি অস্বীকার করছি না। অথবা সৃজিত ঠিকই নিরীশ্বরবাদী, ছবির প্রযোজক করেছেন পুজোর আয়োজন, প্রযোজকদের তো টাকা পয়সা থাকলেই হয়, ট্যালেন্ট না থাকলেও চলে! যেহেতু প্রযোজক নেপথ্যে থাকেন, তাই গোটা সাজসজ্জার কৃতিত্ব পরিচালককে দিয়েই অভ্যেস আমাদের। সঙ্গে থাকে আমার বদ অভ্যেস। ও তো ছাড়তেই পারিনি।’