কুষ্টিয়ায় মৃত স্বামীর লাশ নিয়ে রাতভর শ্মশানে স্ত্রী

Published: 5 July 2021

বিশেষ সংবাদদাতা :


প্রফুল্ল কর্মকারের দুই ছেলেসহ পাঁচ সদস্যই করোনা আক্রান্ত ছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রফুল্ল কর্মকারকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরিবারের সবাই করোনা আক্রান্ত হওয়ায় বাড়িতে স্বামীর মরদেহ নিতে পারেনি স্ত্রী কল্পনা রানী কর্মকার। তাই শনিবার রাতেই হাসপাতাল থেকে স্বামীর মরদহটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিয়ে যান মিরপুর উপজেলার পৌর শ্মশানে। মরদেহবাহী এম্বুলেন্সটি যখন শ্মশানে পৌঁছে তখন শ্মশানের গেটে ঝুলছিল তালা। এসময় বৃষ্টি শুরু হলে অ্যাম্বুলেন্সের লোকজন শ্মশানের পাশে মরদেহ রেখে চলে যায়। তখন স্ত্রী কল্পনা রানী স্বামীর মরদেহ পাশের গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় নিয়ে যান।

 

সেখানেই সারারাত স্বামীর মরদেহ নিয়ে অপেক্ষা করেন তিনি। এ সময় কেউ পাশে পাননি তিনি।
রোববার সকালে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বিষয়টি জানতে পেরে মরদেহটি সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন। নিহত প্রফুল্ল কর্মকার (৭০) কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের হরিতলা এলাকার বাসিন্দা।

 

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে শনিবার রাতে মরদেহটি শ্মশানে নেওয়া হয়। মধ্যরাতে কল্পনা কর্মকার ও তার স্বামীর মরদেহ ছাড়া আর কেউ সেখানে ছিলেন না। তখন বৃষ্টিও হচ্ছিল। এ সময় কল্পনা কর্মকার শ্মশান কমিটির সদস্যদের তার স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি জানান কিন্তু কেউ তাতে সাড়া দেননি। প্রফুল্ল কর্মকারের মৃত্যুর পর স্ত্রী কল্পনা তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুই ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি করোনায় আক্রান্ত। তাই তারা শ্মশানে আসতে পারেননি।

কল্পনা রানী কর্মকার বলেন, শনিবার রাতে আমার স্বামী মারা যান। কুষ্টিয়া হাসপাতালে তিনি মারা গেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ শ্মশান ঘাটে নিয়ে আসি। কারণ বাড়িতে সবাই করোনা আক্রান্ত। তাই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অ্যাম্বুলেন্সের সবাই আমাকে ও আমার স্বামীর লাশ রেখে চলে যায়। তখন শ্মশানের গেটে তালা দেওয়া ছিল। প্রচ- বৃষ্টি শুরু হলে আমার স্বামীর লাশ নিজে বহন করে স্কুলের বারান্দায় নিয়ে যাই। সেখানে সারারাত একাই কাটিয়েছি। আত্মীয়-স্বজন বা এলাকাবাসী কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। পরে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাহায্যে আমার স্বামীর মরদেহ সমাহিত করা হয়।