কানে পুরস্কার পেল না ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

Published: 17 July 2021

পোস্ট ডেস্ক :


মার্কিন পত্রিকা হলিউড রিপোর্টার–এর ডেব্রা ইয়াং ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির প্রদর্শনীর পর লিখেছিলেন, ‘টাইটেলেই আছে সিনেমার প্রধান চরিত্রের পুরো নাম-ডা. রেহানা মরিয়ম নুর। কিন্তু নামটার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য শেষ শটের আগে টের পাওয়া যায় না’। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, নারী হয়ে রেহানা একাই তার ছয় বছরের মেয়ে এবং তার এক শিক্ষার্থীর পক্ষে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যায়। সিনেমাটির ১৬ জুলাই শেষ দিনে পুরস্কার জয়ের সব রকম সম্ভাবনা আছে। ‘রেহানা’ চরিত্রের ওপর জোর দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সাময়িকী ভ্যারাইটি। বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা অধীর আগ্রহে বসে ছিল সুসংবাদ শোনার জন্য। আমিও অপেক্ষা করছিলাম বিশ্বখ্যাত কান উৎসবের আঁ সার্তে রিগায় বিভাগের পুরস্কার যেন অর্জন করে আমাদের সিনেমাটি। তবে কানে শেষ হাসি হাসতে পারল না ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। পুরস্কার জয়ের আনন্দে ভাসা হলো না আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ও আজমেরী হক বাঁধনের।

কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৪তম আসরে আঁ সার্তে রিগা বিভাগে দেওয়া ছয়টি পুরস্কারের একটিও আসেনি তাদের হাতে। গতকাল রাতে পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের সাল দুবুসি প্রেক্ষাগৃহে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এখানে সাদ ও বাঁধনের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ছবিটির প্রযোজক জেরেমি চুয়া ও কারিগরি বিভাগে কাজ করা শিল্পীরা।

আঁ সার্তে রিগা বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র হয়েছে রাশিয়ার নারী নির্মাতা কিরা কোভালেনকার ‘আনক্লেনসিং দ্য ফিস্টস’। ছবিটির গল্প এক তরুণীকে ঘিরে। নিজের পরিবারকে সে খুব ভালোবাসে। কিন্তু এই পরিবারেই তার দমবন্ধ হয়ে ওঠে। তাই পরিবার থেকে মুক্ত হওয়ার লড়াই করে মেয়েটি।এবারের আঁ সার্তে রিগা’য় বিচারকদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্রিটিশ নারী নির্মাতা আন্দ্রেয়া আর্নল্ড। সেজন্যই হয়তো ছয়টি পুরস্কারের চারটিই জিতেছে নারী পরিচালকের ছবি। এর মধ্যে ফরাসি অভিনেত্রী-নির্মাতা আফসিয়া আর্জির ‘গুড মাদার’ ছবিটি সম্মিলিত অভিনয়ের পুরস্কার জিতেছে। স্পেশাল মেনশন পেয়েছে মেক্সিকোর তাতিয়ানা হয়েসো পরিচালিত ‘প্রেয়ারস ফর দ্য স্টোলেন’।প্রাইজ ফর কারেজ পেয়েছে রোমানিয়ার‌ তেওদোরা আনা মিহাই পরিচালিত প্রথম ছবি ‘লা সিভিল’। আইসল্যান্ডের ভালদিমার ইওহানসনের প্রথম ছবি ‘ল্যাম্ব’ জিতেছে প্রাইজ ফর অরিজিনালিটি সম্মান। জুরি প্রাইজ পেয়েছে অস্ট্রিয়ার সেবাস্টিয়ান মায়েসের ‘গ্রেট ফ্রিডম’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কান উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো। শুরুতে আঁ সার্তে রিগায় নির্বাচিত ২০টি ছবির অংশবিশেষ দেখানো হয়। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ছিলো ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।

৭ জুলাই সাদ-বাঁধন টিমের উপস্থিতিতে ছবিটির প্রথম প্রিমিয়ার হয় সেখানে। এরপর থেকেই কান নদীর তীরে ভেসেছে বাংলাদেশের এই ছবিটির নাম।

তবে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির টিম কানে পৌছার পর যে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পেয়েছে, অন্য সব বড় সিনেমার সাথে প্রতিযোগিতা করেছে-এটাই বা কম কিসের ! আগামীকাল বিকালে ফিপ্রেসকি (ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস) পুরস্কার দেওয়া হবে। এতে বাংলাদেশের ছবিটির স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ আছে। অনেকেই বলছে, এই ক্যাটাগরিতে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবিটি পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০০২ সালে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইট থেকে এই পুরস্কার পেয়েছিলো। কানে বাংলাদেশের একমাত্র পুরস্কার এটাই। তবে অফিসিয়াল সিলেকশনে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির স্থান পাওয়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

আজ রাতে সম্মানজনক কান উৎসবের পর্দা নামবে। ঘোষণা করা হবে এই আয়োজনের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণ পাম বিজয়ী ছবির নাম। শেষমেশ কার ভাগ্যে যাবে স্বর্ণ পাম তা আদতে বিচারকদের প্রধান স্পাইক লি এবং তার প্যানেলের বিচারকদের ওপর নির্ভর করছে।