তালেবানদের স্বীকৃতি দিতেই হবে যুক্তরাষ্ট্রকে-ইমরান খান

Published: 3 October 2021

পোস্ট ডেস্ক :


আজ হোক কাল হোক, আফগানিস্তানের তালেবানদের স্বীকৃতি দিতেই হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। তুরস্কের রাষ্ট্র অধিভুক্ত টেলিভিশন চ্যানেল টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি আরো বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর হতাশাগ্রস্ত ও বিভ্রান্তিকর এক অবস্থায় পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এখন একটি বলির পাঁঠা খুুঁজছে আর অন্যায়ভাবে টার্গেট করছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

সমালোচকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর আফগানিস্তানে পশ্চিমা সমর্থিত সরকার ধসে পড়ে। তীব্র চাপ সত্ত্বেও ৩১ শে আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধের ইতি ঘটে।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে তালেবানদের সঙ্গে সেনা প্রত্যাহারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কাতারের রাজধানী দোহা’য় এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এতে তালেবানদের শর্ত দেয়া হয়। বলা হয়, তারা আল কায়েদার মতো সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে হামলা করতে দেবে না। ১৫ই আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবানরা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমপক্ষে ৯০০ কোটি ডলার জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আফগানিস্তানে অর্থের তীব্র তারল্য সঙ্কট দেখা দেয়।

সাক্ষাতকারে এসব প্রসঙ্গ সামনে আনেন ইমরান খান। তিনি বলেন, যদি আফগানিস্তানের এই রিজার্ভ অবমুক্ত না করে যুক্তরাষ্ট্র, তাহলে সেখানে এক বিশৃংখল অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সমাধানে আসতে হবে। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী পাকিস্তান। তাদের আশঙ্কা, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও মানবিক সঙ্কট তাদেরকেও আক্রান্ত করবে। এরই মধ্যে তারা আফগানিস্তানের প্রায় ৩৫ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।

মনে করা হয় তালেবানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে ইসলামাবাদের। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গত ২০ বছরের যুদ্ধে তালেবানদের অনেক শীর্ষ নেতা অবস্থান নিয়েছিলেন পাকিস্তানে। এমনকি আল কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছিলেন ইসলামাবাদের অ্যাবোটাবাদে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলরা তাকে এক রাতের অভিযানে হত্যা করেছে। এ অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোকে তালেবানদের সঙ্গে চুক্তি করার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে ইমরান খানের সরকার। সাক্ষাতকারে ইমরান খানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- আপনি কি তালেবানপন্থি? জবাবে তিনি বলেন, তিনি সামরিক সমাধানের বিরোধী। আফগানিস্তানের সমস্যার একমাত্র উপায় হলো শান্তিপূর্ণ সমাধান। তিনি আরো বলেন, তালেবানদেরকে শুধু পাকিস্তান স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা বড় কিছু ব্যবধান তৈরি করবে না। তবে আঞ্চলিক এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর যৌথ স্বীকৃতি একটি উত্তম সমাধান এনে দেবে।

সাক্ষাতকারে ইমরান খান জানান, পাকিস্তানি তালেবান, যারা টিটিপি নামে পরিচিত, তাদের কিছু গ্রুপের সঙ্গে তার সরকার বর্তমানে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব আলোচনা হচ্ছে আফগানিস্তানে। যদি এক্ষেত্রে পুনরেকত্রীকরণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তাহলে টিটিপির সদস্যদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ ‘সিলেক্টিভ’ বা বাছাইকৃত হতে পারে না। কারণ, ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে যে লকডাউন বহাল রেখেছে, সেদিকেও দৃষ্টি দেয়া উচিত। পাকিস্তান এখন এক ঐতিহাসিক পর্যায় অতিক্রম করছে। সেটা হলো, চার দশকের যুদ্ধ শেষে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। না হয়, ভুলপথে, বিশৃংখল অবকস্থার মধ্যে যেতে হবে। তাতে সৃষ্টি হবে বিশাল মানবাধিকার ও শরণার্থী বিষয়ক সঙ্কট, যা আফগানিস্তানের সব প্রতিবেশীকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইমরান খান বলেন, এই দুটি দেশ অব্যাহতভাবে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছে।