রংপুরে নারী সাংবাদিকের ওপর বর্বরোচিত হামলা
আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

Published: 6 October 2021

মোঃ মমিনুর রহমান, রংপুর থেকে :

রংপুরে নারী সাংবাদিকের উপর বর্বরোচিত হামলা, নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, নির্যাতিত নারী সাংবাদিক আফরোজা সরকার। এসময় বক্তব্য রাখেন, ক্লাবের সহ-সভাপতি তাজিদুল ইসলাম লাল, সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ আহম্মেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বাবলা, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার, প্রেসক্লাব সদস্য মেরিনা লাভলী, প্রেসক্লাব সদস্য ফরহাদুজ্জামান ফারুক, প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুব রহমান হাবু প্রমুখ।

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ক্লাব, রংপুর। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাধারণ সদস্য এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ক্লাবের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২ (দুই) বছর পর পর সদস্যদের কন্ঠভোটে অথবা সরাসরি প্রত্যক্ষ ভোটে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করে আসছে। গত ২৪.০৯.২০২১ইং শুক্রবার বেলা ৩টায় ক্লাব কার্যালয়ে পূর্বঘোষিত সাধারণ সভা শেষে খাবার বিতরনের সময় কতিপয় বহিস্কৃত সদস্য সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সাধারণ সভায় বর্বরোচিত হামলা চালায়। এতে আমিসহ ক্লাবের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হই। হামলার সময় ক্লাবের বহিস্কৃত সদস্য সরকার মাজহারুল মান্নানের নেতৃত্বে বহিস্কৃত সদস্য নজরুল ইসলাম রাজু, ৮ বছর আগে ক্লাবের বহিষ্কৃত সদস্য আঃ আজিজ চৌধুরী সাঈদ এবং ক্লাবের সদস্য, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজাফ্ফর হোসেনসহ ১৫/২০ জন আমাকে ঘিরে ধরে ঐ সভায় আমি কেন এসেছি প্রশ্ন করে অত্যন্ত অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং আমার পরনের জামাকাপড় টানাহেঁচড়া করে ছিড়ে ফেলে। আমি প্রাণপণে তাদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করলে এ সময় তারা আমাকে নির্মমভাবে মারপিট করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। আমার সহকর্মীরা গুরুত্বর আহতাবস্থায় আমাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় মামলা করি। মামলা নং-৮৩, তারিখ-২৮.০৯.২০২১ইং।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, মামলার ১ (এক) সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও চিহ্নিত হামলাকারী আসামীদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। যারা একজন নারী সাংবাদিকের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়, যাঁদের কাছে নারীদের কোনো সম্মান মর্যাদা নেই এবং মা-বোনেরা নিরাপদ নয়, তারা এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন? মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিগণের প্রতি আমার মানবিক আবেদন চিহ্নিত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করুন, আইনের আওতায় আনুন। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী সাংবাদিক লেবাজধারী হামলাকারীরা ঘটনার দিন শুধু আমাকেই আক্রমন করেনি, রিপোর্টার্স ক্লাবের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজম আলী পারভেজ, ক্লাব সদস্য আব্দুর রশীদ জীবন, আহসান হাবিব মিলন ও হারুন অর রশীদকেও পিটিয়ে আহত করে। তবে আমরা হতবাক হয়েছি যে, যারা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সভায় ন্যাক্কারজনক অতর্কিত হামলা চালিয়েছে; তারাই বীরদর্পে আমাদের আগেই আরপিএমপি কোতয়ালী থানায় মামলা করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি দাবি করে বলেন, রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সভায় হামলা ও নারী সাংবাদিক লাঞ্ছিতকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবী করছি এবং সাংবাদিক সহকর্মিদের লেখনীর মাধ্যমে ন্যাক্কারজনক এই হামলার ঘটনা তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।

রিপোর্টার্স ক্লাব নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, ২০১৯-২১ মেয়াদী প্রত্যক্ষ ভোটে মাজহারসহ বহিস্কৃতরা তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন না হওয়ায় নির্বাচিত কমিটির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে রাস্তায় একা পেয়ে মারপিট করেছে। পরবর্তীতে অভিষেক অনুষ্ঠান পন্ডের ষড়যন্ত্র করে বানচাল করে দিয়েছে। তারা ক্লাবের প্যাড, সিল চুরি/ তৈরী করে বিভিন্নভাবে অপব্যবহার করছে। দির্ঘদিন ধরে অব্যাহত ষড়যন্ত্রে মাধ্যমে ক্লাবকে অতিষ্ঠিত করে তুলেছে। সর্বশেষ ষড়যন্ত্র সাধারণ সভায় পরিকল্পিত ন্যাক্কারজনক হামলা। অপর একজন বহিস্কৃত সদস্য বাদশা ওসমানী রিপোর্টার্স ক্লাবের ভবন নির্মানের সময় ক্লাবের স্টিলের আলমারী, চেয়ার টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র বাদশা ওসমানীর কাছে গচ্ছিত রাখা হয়। পরবর্তীতে সেগুলো আর ফেরত দেয়নি। এই ঘটনাসহ ক্লাবের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী নানান অপরাধে বহিস্কৃত হয়। ক্লাবকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টাকারী, ক্লাবের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কর্মকান্ডের সুনির্দিষ্ট অপরাধে মাজহারসহ বহিস্কৃত ৬ জনকে পুণর্বহালে মেট্রো পুলিশ ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ একটি স্বাধীন সাংবাদিক সংগঠনের ওপর চাপ সৃষ্টি ও অন্যায় আবদার চাপানোর চেষ্টা করছেন। তারা আরও বলেন, গত ২৪.০৯.২০২১ইং তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব কিছুটা শিথিল হলেও ক্লাব সদস্যদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে ২০২১-২০২৩ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটি কন্ঠভোটের মাধ্যমে গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ৬১ জন সদস্যের মধ্যে সেদিন সাধারণ সভায় উপস্থিত ৪৯জন সদস্যের মধ্যে মাত্র দু’জন সদস্য প্রত্যক্ষ ভোটের পক্ষে মত দেন।
বক্তারা বলেন, ক্লাবের বহিস্কৃত সদস্য বাদশা ওসমানী। যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বদরগঞ্জে গণহত্যা মামলার আসামি এ্যাড. বায়েজীদ ওসমানীর আপন ছোট ভাই। বাদশা ওসমানী শিবির ও জামায়াত সম্পৃক্ত থাকায় একসময় চট্টগ্রামে গা ঢাকা দিয়ে সেখানে মসজিদের মুয়াজ্জিনসহ মক্তব-মাদ্রাসায় আলখাল্লা ও দাড়িটুপি পরিহিত হয়ে হুজুরের দায়িত্ব পালন করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জন্মস্থান রংপুরের বদরগঞ্জে ফিরে দাড়িটুপি ফেলে ক্লিনসেভ হয়ে সাংবাদিকতা জগতে নাম লেখান। রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবে হামলাকারী আরেকজন নজরুল ইসলাম রাজু মিঠাপুকুরে নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও মামলার আসামি। বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করে এসব মাসতুতোরা পরিকল্পনামাফিক জোটবদ্ধভাবে রংপুরের চিরচেনা সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন সাংবাদিকতার মাঠকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের টার্গেট রংপুরে সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করা।

তারা আরও বলেন বলেন, রংপুরের সাংবাদিক সমাজের পতিত একজন আঃ আজিজ চৌধুরী সাঈদ। তিনি আনসার বাহিনীতে চাকরি করাকালীন গুরুতর অপরাধ করার কারণে চাকরি খোয়া যায় এবং কালোতালিকাভুক্ত হন। এরপর গত ১০ বছর আগে যেকোনভাবে রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্য হন। পরবর্তীতে গত ৭/৮ বছর আগে মাজহারগং তার সদস্য পদ বাতিল করে দেন। চলতি বছর পরপর দু’বার তিনি নতুনভাবে সদস্য হবার জন্য রিপোর্টার্স ক্লাব বরাবর আবেদন করেন। বর্তমানে তাকে দোসর বানিয়ে রাজশাহী বি.বি’র সাবেক শিবির নেতা, অসংখ্য নারী কেলেংকারী মামলার আসামী মহান পেশা সাংবাদিকতার মোড়কের অপব্যবহারকারী সরকার মাজহারুল মান্নান। ২০১৭-১৯ মেয়াদের কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য মূদ্রিত রিপোর্টার্স ভয়েসে’র বিজ্ঞাপনের গচ্ছিত টাকা ফেরত চাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি জঠিল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ন্যায় তারা অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। আরেকজন মোজাফ্ফর হোসেন যিনি রিপোর্টার্স ক্লাবকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে রংপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী একটি হাইস্কুলের সভাপতি বনে গিয়ে স্কুলের মার্কেট নির্মাণ, দোকানপাট বরাদ্দ ও নিয়োগ বানিজ্যে পুকুর চুরি করতে গিয়ে বর্তমানে দুদক’র মামলাসহ একাধিক মামলার আসামী। তারা বলেন, সাধারণ সভায় প্রথমাংশে সভাপতিত্ব করেন ক্লাব সভাপতি হালিম আনছারী। আয়/ব্যয়সহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা শেষে তিনি পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে দেন। পরবর্তীতে অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুব রহমান হাবু সমাপনী বক্তব্যে নারী সাংবাদিক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানীর এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। সম্মেলনে রংপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির বিভিন্ন সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।