বানিয়াচংয়ের দূর্গাপূজায় শাহ্জিদের ২‘শ বছরের ঐতিহ্য

Published: 6 October 2021

শাহ সুমন, বানিয়াচং :

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে শাহ্জি বাড়ির ঐতিহ্য ২‘শ বছরের দূর্গপূজার উৎসব। ৬ অক্টোবর বুধবার শুভ মহালয়ের মাধ্যমে বাঙালী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা শুরু হয়েছে ।বানিয়াচং উপজেলার ৪ নম্বর ইউনিয়নের রায়ের পাড়া গ্রামের রায় বংশীয় শাহ্জি পরিবার ব্রিটিশ আমলে জমিদার ছিল।

 

ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে শাহ্জি পরিবারের জমিদারী পূর্ব পাকিস্তান আমলের শেষ পর্যন্ত ছিল। পরবর্তীতে তাদের জমিদারী শেষ হলেও পরিবারটির ঐতিহ্য দূর্গাপূজার প্রচলন এখনো রয়েছে।শাহ্জি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,বানিয়াচংয়ে প্রায় ২‘শ বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে তারা তাদের সবচে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা অনুষ্টিত করে আসছেন। আদি ও পুরাতন মন্ডপটি সময় সময়ে সংস্কার করা হয়েছে। সবচে বড় সংস্কারটি করেন জমিদার রামলোচন। নিয়মিত দূর্গাপূজা অনুষ্টান করার জন্য বাংলা ১৩‘শ সনে তিনি একটি স্থায়ী দূর্গামন্ডপ নির্মাণ করেন যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। সেই সাথে পূজার খরচের জন্য ১৮ কেদার ধানের জমি দান করে গেছেন।কারন দূর্গাপূজাকে খরচের হিসেবে রাজরাজরাদের পূজা উৎসব বলা হয়ে থাকে।যদিও বর্তমানে জমির পরিমাণ কমে গেছে তবুও উত্তরাধিকারীগণ যুগ যুগ ধরে নিয়মিত দূর্গাপূজা অনুষ্টিত করে যাচ্ছেন।এক বছরের জন্যও পূজো বন্ধ করা হয় নাই। এমন কি ১৯৭১ সালেও নির্বিঘ্নে ওই পরিবারের লোকজন দূর্গাপূজা অনুষ্টিত করে গেছেন। সার্বজনীন দূর্গাপূজা প্রচলনের পূর্বে দূর্গাপূজার উৎসব হিন্দু সচ্ছল পরিবারের মাধ্যমেই অনুষ্টিত হত।

দেশে এ ধরনের সম্পন্ন হিন্দু পরিবারগুলো লুপ্ত হওয়ার ফলে বর্তমানে সার্বজনীন দূর্গা মন্ডপের আধিক্য।কিন্তু বানিয়াচংয়ের ঐতিহ্যবাহী শাহ্জি পরিবার বংশ পরম্পরায় এখনো পূর্বপুরষদের ধর্মীয় এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন গভীর যত্নে।এ ব্যাপারে পরিবারটির ৬ষষ্ঠ তম প্রজন্ম শ্রাবস্তী রায় মন্টি জানান,দূর্গাপূজা আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। কিন্তু বর্তমানে ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও এটি এখন আমাদের পরিবারের ঐতিহ্যহের সাথে মিশে গেছে।এই ঐতিহ্যকে আমরা সযতনে লালন করি।এ ব্যাপারে কথা বলেন পরিবারটির পঞ্চম প্রজন্ম অলক কুমার রায়। তিনি জানান, দু‘শো বছরের উপরে আমরা এই পূজো করে আসছি।আমাদের পূর্বপুরূষগন প্রচলন করেছিলেন আমরা তা এখনো ধরে রেখেছি।তবে আগে জাকজমক বেশি ছিলো। মানুষ ও বেশি ছিল। এখন আর আগের জাকজমক না থাকলেও আমরা দূর্গাপূজা নিয়মিতই করে আসছি।আমাদের প্রতিবেশি বা অন্য কোন ধর্মের লোকজন আমাদেরকে কখনই কোন সমস্যা করেন নাই।শাহ্জি পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বানিয়াচং রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি বিপুল ভূষন রায় বলেন, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য দূর্গাপূজার এই উৎসবটি।আমাদের খোজখবর নিতে আসেন প্রশাষনের লোকজন। জনপ্রতিনিধি, সমাজপতি সহ সব শ্রেনীপেশার মানুষের পদচারনায় এটি একটি উৎসবে পরিনত হয়।