দেশে ছয় বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩,৮৫৬

Published: 10 October 2021

পোস্ট ডেস্ক :

থামছেই না সড়ক দুর্ঘটনা। ঝরছে তাজা প্রাণ। কেউ কেউ চির জীবনের মতো পঙ্গুত্ব বরণ করছে। উচ্চগতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেকিং, দক্ষ চালকের অভাব, মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা, সড়ক প্রশস্তকরণ না করা, সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল বাড়া, যত্রতত্র পার্কিং, রাস্তার দুই পাশে হাটবাজার বসানো, ঘুম চোখে গাড়ি চালানো, মাদকাসক্ত চালকদের যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, খানাখন্দ, সড়কের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়া, গতিসীমা না মানা ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি বা দুটি নয়, নানা কারণে ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। চালকদের আইন না মানার অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের মানসিকতা। ঢাকায় ইতিমধ্যে সিগন্যাল লাইট অকার্যকরে পরিণত হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ গাড়ির সামনে গিয়ে না দাঁড়ান ততক্ষণ চালকরা তাদের গাড়ি থামানোর কোনো প্রয়োজনই মনে করেন না।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান মানবজমিনকে জানান, ‘ ট্রাফিক আইন না মানার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ কারণে পুলিশ নানা ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।’

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমরা সরকারকে একাধিক সুপারিশমালা দিয়েছি। কিন্তু, তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

২০১৮ সালের ৩০শে জুলাই বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। আহত হন আরও ১৫ জন। প্রতিবাদে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে পুরো শহরে যান চলাচলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তারা নিজেরাই সড়কে নেমে গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের কাগজ দেখতে চায়। সরকার কর্তৃক সারা দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করা হবে বলে এ আশ্বাস দেয়া হলে এরপরই তারা ঘরে ফিরে যায়। কিন্তু, এরপরও সড়কে ফিরে আসেনি শৃঙ্খলা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে ৬৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ৮ হাজার ৬৪২ জন। আর আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ৬ হাজার ৫৫ জন। আর আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯১৪ জন।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২১৪ জন। আর আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৫৫ জন। আর আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩১৩ জন। এ ছাড়াও ২০২০ সালে ৪ হাজার ১৯১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৬ জন। আর আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬০০ জন।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৬ বছরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৯ হাজার ৮৬ জন।

সূত্র জানায়, হাইওয়েতে বেশি ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। তবে জনবল ও যানবাহন সংকটের কারণে বিপাকে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। সারা দেশে ৬৪ জেলার মধ্যে ৪২টি হাইওয়ে পুলিশের অধীনে।

সূত্র জানায়, দেশে সড়কের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে গতি বাড়ছে। কিন্তু, গতিকে নিরাপদ করতে যেসব কাজ করা দরকার তার অভাব রয়েছে। আলাদা লেনের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। আলাদা লেন না থাকায় মহাসড়কে সব বাহন উঠে পড়ে। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষে এবং পেছন থেকে একটি গাড়ি অপর গাড়িকে ধাক্কা দেয়ার কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা।