বিলেতে বড় হাজীপুর প্রবাসীদের মিলনমেলা

Published: 11 October 2021

ইব্রাহিম খলিল :

বড় হাজীপুর। সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার এক ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। গ্রামটিতে অনেক জ্ঞানী,গুনি এবং মহৎ মানুষের জন্ম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন গ্রামের অসংখ্য প্রবাসী। সবচেয়ে বেশী প্রবাসী বিলেতে। দেশটিতে বড় হাজীপুর প্রবাসীদের আগমনের প্রায় অর্ধশতাব্দি হয়েছে। বর্তমানে ইউকেতে এই গ্রামের রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের সন্তানরা। এ দেশে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের সন্তানরা শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছেন। স্ব স্ব পেশায় রাখছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর।

বড় হাজীপুরের কয়েক শতাধিক পরিবার রয়েছে ব্রিটেনে। লন্ডন, নিউক্যাসল, স্কানথর্প, শেফিল্ড, লুটন, বার্মিংহাম, ম্যানচেষ্টার শহরে অধিকাংশ প্রবাসীদের বসবাস। কিন্তুু বৃহৎ আকারে এক সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ খুব কম হয়েছে। গ্রামের প্রবাসী মুরব্বিয়ানরাও অতীতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তবে নানা কারনে এবং বাস্তবায় তা সম্ভব হয়নি। সবার মনেই ছিলো প্রবাসের মাটিতে একসাথে গ্রামবাসীর মিলিত হওয়ার প্রবল বাসনা।

আশার কথা হচ্ছে, দীর্ঘদিন পরে হলেও সেই লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে মিলিত হতে পেরেছিলেন সবাই। আর এই সুযোগ করে দিয়েছে বড় হাজীপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে। সংগঠনটি প্রায় দীর্ঘ ৭ বছর চেষ্টার পর অবশেষে বৃহৎ পরিসরে ‘‘ফ্যামেলি গেট টুগেদার’’ আয়োজন করতে পেরেছে। তাতে যোগ দিয়েছিলেন গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক প্রবাসী। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মিলিত হয়েছিলেন নর্থ ইস্ট ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলে। তাতে যোগ দেন ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে আসা প্রবাসীরা।

রোববার নিউক্যাসলের অভিজাত নর্দাম্ব্রিয়া হলে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের। দুপুর ১টায় ছিলো সময়সূচি। একে একে সবাই এসে জড়ো হতে থাকেন হল প্রঙ্গনে। দীর্ঘদিন পর গ্রামের একে অন্যকে পেয়ে আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেন। খোশগল্পে মেতে উঠেন। খোঁজ খবর নেন এক জন আরেকজনের। আবেগ আপ্লুত হন অনেকেই। দুপুর প্রায় আড়াইটার দিকে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। বড় হাজীপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের চেয়াম্যান আমিনুর রহমান রাকিকের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারী জামিল আহমেদ খান ও ট্রেজারার ইফতেখারুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায় এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউক্যাসল প্রবাসী নূর মিয়া, হাজী সফজ্জুল খান, স্কানথর্প প্রবাসী ড. হাজী তৈয়বুর রহমান মুজাহিদী, শেফিল্ড প্রবাসী নুরুল ইসলাম, লন্ডনের স্যারে এলাকার প্রবাসী সামাদ হোসাইন মুরাদ, এসেক্স প্রবাসী মুহাম্মদ কয়েছ আহমেদ, নিউক্যাসল প্রবাসী মফজ্জুল খান, ট্রাস্টের অন্যতম ফাউন্ডার সদস্য এ জে সেলিম, ওয়ারিংটন প্রবাসী মহসিন আহমেদ মুহন, স্কানথর্প প্রবাসী শুয়েব আহমেদ, নিউক্যাসল প্রবাসী ফরিদ আহমেদ শফি ও লন্ডন প্রবাসী, চ্যানেল এস টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ইব্রাহিম খলিল।

প্রবাসীরা শুভেচ্ছা বক্তব্যে গ্রামের উন্নয়ন, অগ্রগতি, ঐক্য এবং সুনাম ধরে রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সকল ভেদাভেদ ভূলে সবাই মিলে একসাথে গ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। ইউকেতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের সন্তানদের গ্রামের সাথে সম্পৃক্ত করে দেশে-বিদেশে সেতুবন্ধন রচনা করা প্রয়োজন বলে জানান বক্তারা। গ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং পূর্বসূরিদের সাফল্য গাঁথা তুলে ধরতে একটি প্রকাশনা চালুর দাবী জানানো হয়। প্রবাসী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে এওয়ার্ড প্রদান করে নতুন প্রজন্মকে সম্মান জানানোর পদক্ষেপ গ্রহন করাও দরকার বলে অভিমত দেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে গ্রামের দেশে বিদেশে প্রয়াত মুরব্বিয়ান এবং বিশেষ করে সদ্য প্রয়াত গ্রামের কৃতি সন্তান, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং গনপরিষদের সদস্য এডভোকেট লুৎফুর রহমান, গ্রামের আরেক কৃতিসন্তান, স্কানথর্প প্রবাসী এবং তাবলীগ জামাতের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হাজী মর্তুজা মিয়ার স্মরনে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন হাজী সফজ্জুল খান।

সংঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন এক্সিকিউটিভ মেম্বার জাকারিয়া খান, রাশেদ আহমেদ, আজফার আহমেদ, মুহাম্মদ এস জামান, আজিজুর রহমান ছানু, মনওয়ার আহমেদ, আতাউর রহমান মুহসিন এবং রিজওয়ান খান রাজু।

উল্লেখ্য এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৪ সালে ২ ডিসেম্বর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশে গ্রামের দরিদ্র-অসহায় মানুষের সহায়তায় নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ঈদ গিফট, বন্যার্তদের সহায়তা, কোভিডকালীন সময়ে দরিদ্র মানুষের জন্য অর্থ সহায়তা ছাড়াও অতি সম্প্রতি কোভিড নাইনটিন আক্রান্তদের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এসব মানবিক কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ জানান বক্তারা। তাতে সার্বিক সহায়তার আশ^াসও দেন প্রবাসী গ্রামবাসীরা।