ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে সিলেট ছাত্রলীগ ঃ নেতার বাসায় হামলা

Published: 12 October 2021

সিলেট অফিস :

কমিটি ঘোষণার মাত্র ৪ ঘন্টার মধ্যেই সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি প্রত্যাখান করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় নগরীর তেলিহাওর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি নগরীর জিন্দাবাজার আল-হামরা মার্কেটের সামনে আসলে পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দেয়। পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারী নেতাকর্মীরা মিছিলটি চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নব গঠিত কমিটির সেক্রেটারীর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিলেট।


এ সময় তারা টাকার বিনিময়ে কেন্দ্র্রের সংসদ কমিটির শীর্ষপদ বিক্রির অভিযোগ করেন। পাশাপাশি মিছিলকারীরা জেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের নাম ধরে নানা কটুক্তিমূলক শ্লোগান দেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে আগামী এক বছরের জন্য কমিটি অনুমোদন দেন। এতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে টিলাগড় রঞ্জিত গ্রুপের নাজমুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তেলিহাওর গ্রুপের রাহেল সিরাজের নাম ঘোষণা করা হয়।
এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দর্শনদেউড়ি গ্রুপের কিশওয়ান জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাশ্মির গ্রুপের নাঈম আহমদের নাম ঘোষণা হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে আরো ৬ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন, জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান, বিপ্লব কান্তি দাস, মুহিবুর রহমান মুহিব, কনক পাল অরূপ, হোসাইন মোহাম্মদ সাগর ও সঞ্জয় পাশী জয়।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রলীগের একাংশের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। তেলিহাওর গ্রুপের রাহেল সিরাজ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেলেও গ্রুপের অভ্যন্তরে অসন্তোষ চরমে পৌঁছায়। তেলিহাওর গ্রুপের বড় অংশের নেতাকর্মীরা রাহেল সিরাজের পরিবর্তে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চেয়েছিলেন জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খানকে। কিন্তু জাওয়াদকে সাধারণ সম্পাদক না করে কেন্দ্রীয় সদস্য করায় গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিকেল ৪টায় তেলিহাওর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
মিছিলটি নগরীর জিন্দাবাজার আল-হামরা মার্কেটের সামনে আসলে পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দেয়। পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি সামনে অগ্রসর হয়। চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে বিক্ষোভকারী নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। কিছু সময় সড়ক অবরোধ শেষে ফিরে যান তারা।
কেন্দ্রীয় সদস্য থেকে দুই জনের অব্যাহতি : এ দিকে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। মাত্র দুই সদস্যর কমিটি আর ৪ জনকে কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়। কমিটির ঘোষণা করা পরপরই অভিমান করে দুইজন পদত্যাগ করেছেন।
তারা হলেন, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুর রহমান মুহিব ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান। তারা দুজনকেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য করা হয়েছিল। অভিমানী মুহিব নিজেকে কেন্দ্রীয় কমিটির যোগ্য মনে করছেন না। তাই ‘স্বেচ্ছায় অব্যাহতি’ নিয়েছেন উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।
তিনি লিখেন ‘আমাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য করায় আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মানিত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমি এই বিশাল পদের যোগ্য নই। তাই, আমি স্বেচ্ছায় এই পদ থেকে অব্যাহতি নিলাম।’
এরপরই পদ প্রত্যাখান করেন জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘প্রিয় সতীর্থ, সহযোদ্ধা শুভাকাঙ্খী সদ্য ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। আমি উক্ত সদস্য পদ প্রত্যাখ্যান করলাম। রাজনীতি থেকে যখন অপ রাজনীতি শক্তিশালী হয়ে যায়, তখন আমার মতো কর্মীর কাছে প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় থাকে না।’
নতুন সেক্রেটারীর বাসায় হামলা : সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বাসায় হামলা চালিয়েছে ক্ষোব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর আম্বরখানা বড়বাজারস্থ বাসায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
রাহেল সিরাজের ভাই অভিযোগ করেন, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরীয়ার আলম সামাদ, মহানগর শাখার সাবেক সহ সভাপতি সুজেল তালুকদার ও যুবলীগ নেতা দুলাল আহমদের নেতৃত্বে ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে ৩০-৩৫ জন যুবক তার বাসায় হামলা চালান। এ সময় তাকে বাইরে পেয়ে তার উপরও হামলার চেষ্টা করলে তিনি দৌঁড়ে বাসায় ঢুকে নিজেকে আত্মরক্ষা করেন। এরপর হামলাকারীরা বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সুজেল আহমদ তালুকদার হামলার ঘটনায় তার, সামাদ ও দুলাল আহমদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, বিক্ষোব্ধ কোন নেতাকর্মী হামলা করে থাকতে পারে। কারণ কমিটি ঘোষণার পর সিলেট ছাত্রলীগে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। এই ক্ষোভ থেকে কেউ হামলা করে থাকতে পারে।