পানামা, প্যারাডাইস থেকে ব্যতিক্রম কেন প্যান্ডোরা পেপারস!

Published: 14 October 2021

পোস্ট ডেস্ক :


পানামা পেপারস। প্যারাডাইস পেপারস। এরকম প্রায় ৬ থেকে ৭ রকম পেপার ফাঁস হয়েছে। সর্বশেষ ফাঁস হয়েছে প্যান্ডোরা পেপারস। এসবই আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য ধনী শ্রেণির এক রকম বহুস্তর বিশিষ্ট জটিল বিনিয়োগ। কিন্তু কেন এই গোপনীয় বিনিয়োগ! বিশ্বের অনেক দেশই কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে বা কালো টাকার মালিক যারা তাদের পিছু নিয়েছে। এর ফলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীরা দেশের বাইরে অর্থ বিনিয়োগে ব্যস্ত হয়েছেন। তারা তাদের সম্পদের একটি নিরাপদ ব্যবস্থা করার জন্য নতুন এক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন।

তা হলো প্যান্ডোরা পেপারস, যা অফসোর বাণিজ্যের সর্বশেষ ফাঁস হওয়া দলিল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন রেডিফ।
বিদেশি ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে অপসোর প্রতিষ্ঠানে আস্থার ভিত্তিতে অভিজাত শ্রেণি তাদের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন সেখানকার মালিকের নামে। এমন কিছু সুবিধাভোগী মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে প্যান্ডোরা পেপপারস। কথা বলেছে, অভিজাত শ্রেণির ওইসব মালিকের বিনিয়োগ, নগদ অর্থ, সম্পত্তি, শেয়ার ইত্যাদি নিয়ে। আয়কর ফাঁকি দেয়া যায় এমন কমপক্ষে ৩০ হাজার বেসরকারি বিদেশি ট্রাস্টের ওপর বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ করেছেন অভিজাত শ্রেণি। এক্ষেত্রে আইনও সহনীয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে এসব বিষয়ে আয়কর আইন অনেক কড়া।

ভারতের দিক থেকে প্যান্ডোরা পেপারস গুরুত্বপূর্ণ কেন?
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম বিনিয়োগের প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ডকুমেন্ট ফাঁস হয়েছে। এর মধ্যে আছেন প্রায় ৩৫০ জন ভারতীয়। আছে অনিল আম্বানি, বিনোদ আদানি, কিরণ মজুমদার-শাহ, নিরা রাদিয়া, শচীন টেন্ডুলকার, জ্যাকি শ্রুফ এবং সতীশ শর্মার মতো ব্যক্তির নাম। এ তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের অনেকেই এক্ষেত্রে কোনো অন্যায় করেননি বলে জানিয়েছেন। তবে এরই মধ্যে ভারতের বিভিন্ন এজেন্সির তদন্তাধীন রয়েছেন কিছু মানুষ।

প্যান্ডোরা পেপারস ব্যতিক্রম কেন?
ছয় থেকে সাতবার এমন বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন দলিল ফাঁস হয়েছে। তার মধ্যে আছে পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস। এতে কোনো একটি দেশের ব্যক্তিবিশেষ, করপোরেট অথবা অন্য কেউ বিদেশি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন, এ দিকটিতে নজর দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্যান্ডোরা পেপারস হলো এমন একটি পন্থা যার মধ্য দিয়ে ধনী অভিজাত শ্রেণির মানুষ বহুস্তর বিশিষ্ট ট্রাস্ট অবকাঠামো তৈরি করেছেন। নিজেদের বিনিয়োগকে নিরাপদ রাখতে কিভাবে সেসব ট্রাস্টকে অতি ধনীরা ব্যবহার করেছেন তার কিছুটা ফুটিয়ে তুলেছে প্যান্ডোরা পেপাপরস। বৈশ্বিক বিভিন্ন শ্রেণির সাংবাদিক তদন্ত করে এসব তথ্য বের করেছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন, এসব মানুষ নিজেদের পরিচয় আড়াল করার জন্য এসব ট্রাস্ট সৃষ্টি করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য যাতে তারা কর্তৃপক্ষের লেন্সে ধরা না পড়েন এবং নিরাপদ থাকেন।

কিভাবে কাজ করে?
একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করা হলো মৌলিক অর্থে বিষয়টিকে আয়োজন করা, যেখানে ট্রাস্টি হিসেবে একটি তৃতীয় পক্ষ থাকবে এবং সেই পক্ষ সুবিধাভোগী মালিকের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ট্রাস্টি হলেন আইনগত মালিক এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
সুবিধা অসুবিধা
ভারত এমন একটি দেশ, যেখানে দেশের ভিতরে বা বাইরে ট্রাস্ট গঠনকে বৈধতা দিয়েছে। ইন্ডিয়ান ট্রাস্টস অ্যাক্ট নামের আইন দিয়ে ভারতে ট্রাস্ট পরিচালিত হয়। ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠাকারীর আইনগত বৈধতার দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় না। কিন্তু তাকে ট্রাস্টি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। যারা সুবিধা পাবেন তাদেরকে সেই সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা দেয়া আছে। বিদেশেও এই আইনে ট্রাস্ট গঠনের অনুমোদন আছে। বিদেশে বৈধ উপায়ে এবং প্রকৃত উপায়ে ট্রাস্ট গঠন আইনগতভাবে বৈধ। তবে বিষয়টি প্যাচ লাগে তখন, যদি ট্রাস্টি বা বিনিয়োগকারী এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গোপন রাখেন, আয়কর জমা দেয়ার সময় তা ঘোষণা না করেন।
অভিজাতরা কেন বিদেশে বিনিয়োগ করেন?
বিদেশের মাটিতে একটি ট্রাস্ট করতে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশের গোপনীয়তা মানার বিধান আছে। যদি সংশ্লিষ্ট দেশের তদন্তকারীরা এমন দৃঢ় প্রমাণ পান যে, বিনিয়োগকারী মালিক অসৎ উদ্দেশে বিনিয়োগ করেছেন , তাহলে ওই দেশের আদালত বিনিয়োগকারীর দেশকে

অনুরোধ করতে পারে তা ফেরত আনতে।
সবার বিরুদ্ধেই কি ব্যবস্থা নেবে ভারত?
বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ ওই তালিকায় আসা সবার বিষয়ে তদন্ত করবে। তারা কথা বলবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। যদি তারা মনে করে, ওই ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশে বিনিয়োগ করেছেন, তাহলে নোটিশের মাধ্যমে তার কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। প্রয়োজনে সার্ভে করতে পারেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যদি অঘোষিত সম্পদের তথ্য পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্লাক মানি অ্যাক্ট সক্রিয় করা হবে। এর অর্থ হলো অঘোষিত ওই অর্থ দাবি করতে পারবেন ভারতীয়রা।