সুদানে সামরিক অভ্যুত্থান!

Published: 25 October 2021

পোস্ট ডেস্ক :


সুদানের সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদুককে গৃহবন্দি করেছে। আজ সোমবার খুব ভোরে সেনাবাহিনীর অজ্ঞাত একটি ফোর্স তার বাড়ি ঘিরে ফেলে। এর পরপরই সামরিক অভ্যুত্থানের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। দৃশ্যত, পরিস্থিতি যা বলছে, তাতে সেখানে সামরিক অভ্যুত্থানের আলামত পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখনও সেনাবাহিনী এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জবাবে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। প্রধানমন্ত্রীসহ মোট চারজন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাকে সেনারা আটক করেছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হামদুকের একজন উপদেষ্টা ও দেশটির সার্বভৌম কাউন্সিলের একজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করার অল্প পরেই প্রধানমন্ত্রী হামদুকের বাড়িতে অভিযান চালায় সেনারা। সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিবা মর্গান বলছেন, দেশে টেলিযোগাযোগ সীমিত করা হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, শিল্পবিষয়ক মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সামান্য আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। তার বাড়ির চারপাশে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেনারা অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয়নি। করেনি কোনো সংবাদ সম্মেলন। দেয়নি কোনো বিবৃতি। অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সাধারণ জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

অনলাইন বিবিসি বলছে, খুব ভোরে অজ্ঞাত সেনারা বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদুক ও কমপক্ষে চারজন মন্ত্রীকে আটক করেছে। দীর্ঘদিনের শাসক ওমর আল বশিরকে দু’বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনারা। প্রতিষ্ঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তখন থেকেই দেশটির সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।

এখন রাস্তায় জনবিক্ষোভ চলছে, এর নেপথ্যে কে বা কারা আছেন, তা স্পষ্ট জানা যায়নি। ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছে, ‘জয়েন্ট মিলিটারি ফোর্সেস’ নেতাদের আটক করেছে। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে । রাজধানী খার্তুমে ইন্টারনেট সংযোগ ডাউন করে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে উত্তেজিত জনগণকে রাস্তায় টায়ারে আগুন দিতে দেখা যাচ্ছে। শহরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী। বেসামরিক জনগণের চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে খার্তুম বিমানবন্দর। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো স্থগিত করা হয়েছে। ওদিকে দেশটির প্রধান গণতন্ত্রকামী গ্রুপ বিরোধীদের প্রতি যেকোনো সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে গর্জে উঠার আহ্বান জানিয়েছে।

২০১৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বশিরকে উৎখাতের পর থেকেই সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ চলছে। সেনাবাহিনী ও ঢিলেঢালা একটি জোট গ্রুপ- ফোর্সেস ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জ গঠন করতে সম্মত হয় তারা। চালু করা হয় সভারিন কাউন্সিল বা সার্বভৌম পরিষদ। দেশটি আরো এক বছর পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল এই পরিষদের মাধ্যমে। এরপর নির্বাচন দিয়ে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তারের কথা ছিল।

কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগির এই চুক্তি সব সময়ই ছিল খিটখিটে ধরনের। এতে উপস্থিত ছিল রাজনৈতিক বিরোধী বিপুল সংখ্যক গ্রুপ। ফলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদেরও বিরোধ ছিল। সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বশিরের অনুসারীরা একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়। তখন থেকেই উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে। এ মাসে সুদানের গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের বিরোধীরা রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় বিক্ষোভ করে। তারা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনার আহ্বান জানায়। গণতন্ত্রপন্থি গ্রুপগুলো বলছে, এটা ছিল সেনাবাহিনীর আবার ক্ষমতা দখলের জন্য একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে খার্তুমের রাস্তায়।