আফগানিস্তানে হাহাকার, খাবারের জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে মানুষ

Published: 8 November 2021

পোস্ট ডেস্ক :


আফগানিস্তানে হাহাকার। খাবারের জন্য হন্যে হয়ে ছুটছে মানুষ। তার ওপর খরা। শীত জানান দিয়েছে এরই মধ্যে। বিপর্যয়কে আরো ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে এসব বিষয়। ফলে এই শীতে ‘পৃথিবীতেই নরক যন্ত্রণার’ মুখোমুখি আফাগানরা। তাদের এই ভয়াবহতা তুলে ধরেছে অনলাইন বিবিসি। এতে সাংবাদিক জন সিম্পসন লিখেছেন, রাজধানী কাবুল থেকে ৫০ মাইল পশ্চিমের ময়দান ওয়ারডক।

সরকারিভাবে কিছু আটা দেয়া হচ্ছে সেখানকার একটি স্থানে। তাতে কয়েক শত মানুষের গাদাগাদি, ভিড়। এই আটা সরবরাহ দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। তা হাতের নাগালে পেতে মানুষের হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি। কিন্তু তাদেরকে যৌক্তিক উপায়ে শান্ত রেখেছে তালেবান সেনারা। কিন্তু কিছু মানুষকে বলে দেয়া হয়েছে, তারা এই সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ত নয়। এসব মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে। একজন প্রবীণ বললেন, শীত এসে গেছে। যদি রুটিরও ব্যবস্থা করতে না পারি, তাহলে কিভাবে এই শীত পাড় করবো জানি না।

আফগানিস্তানে কমপক্ষে দুই কোটি ২০ লাখ মানুষের সাহায্য প্রয়োজন। তাদেরকে সহায়তা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। বিশেষজ্ঞরা এই শীত নিয়ে যে পূর্বাভাস দিচ্ছেন, পরিস্থিতি যদি তাই হয়, তাহলে বিপুল সংখ্যক মানুষ অনাহারে থাকবেন। দেখা দেবে ভয়াবহ এক দুর্ভিক্ষ।

রোববার কাবুল সফরে গিয়েছিলেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে যা বলেছেন তা এলার্মিং- উদ্বেগজনক। ডেভিড বিসলে বলেছেন, আপনি যেমনটা কল্পনা করছেন পরিস্থিতি সম্ভবত তার চেয়েও খারাপ হতে চলেছে। বাস্তবে আমরা এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট অবলোকন করছি। আফগানিস্তানে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের পর্যাপ্ত খাবার নেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষ অনাহারের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। আগামী ৬ মাস হতে যাচ্ছে বিপর্যয়কর। একে বলা যেতে পারে পৃথিবীর বুকে এক নরক যন্ত্রণা।

১৫ই আগস্ট তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে। এর আগে ক্ষমতায় ছিলেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি। তিনি তালেবানদের হুমকিতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু শীতের ভয়াবহতা মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছিলেন এবং এ বিষয়ে আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। তিনি ক্ষমতায় থাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। তারা নানা রকম সহায়তা দিয়ে আফগানদের বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু আশরাফ গণির সরকার উধাও হয়ে যাওয়ার পর সেই সহায়তারও বিনাশ ঘটেছে। পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানে সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। তালেবানদের যে শাসকগোষ্ঠী মেয়েদের শিক্ষায় বাধা সৃষ্টি করে, শাস্তির ক্ষেত্রে শরিয়া আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করে- তাদেরকে বিদেশিরা সাহায্য দিতে চায় না।

আফগানিস্তানের লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে ভয়াবহ অনাহারে থাকার হাত থেকে বাঁচতে তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে? এমন প্রশ্নে বিশ্বের সরকারগুলো এবং উন্নত দেশগুলোর বিলিয়নিয়ারদের প্রতি তিরস্কার অর্থে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন ডেভিড বিসলে। তিনি বলেন, তারা যদি জরুরি ভিত্তিতে সহায়তার জন্য এগিয়ে না আসেন তাহলে এক ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করতেই হবে। ডেভিড বিসলের ভাষায়, বিশ্ব নেতা ও বিলিয়নিয়ারদের প্রতি আমার আহ্বান: একবার কল্পনা করুন তো ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে আপনার ছোট্ট একটি মেয়ে অথবা ছেলে, অথবা কোনো নাতিপুতি! যদি এমন হয়, তাহলে তো আপনি সম্ভাব্য সবকিছুই করবেন তাকে বাঁচাতে। এখন বিশ্বে ৪০০ ট্রিলিয়ন অর্থ গচ্ছিত আছে। এই বিশ্বে ক্ষুধায় কেউ মারা যাবে- এটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা কোনো শিশুকে খাবারের অভাবে মারা যেতে দিতে পারি না। তাতে ওই শিশুটি বিশ্বের যেখানকারই হোক না কেন, আমি সেই স্থানের কোনো তোয়াক্কা করি না।

২০০১সালে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় শহর বামিয়ানে তালেবানরা বৌদ্ধের বেশকিছু প্রাচীন ও সুন্দর মূর্তি ধ্বংস করেছিল। সেখানে ফাতেমা নামের একজন বিধবার সাক্ষাত মিলেছে। তার সঙ্গে আছেন তিন থেকে ১৬ বছর বয়সী সাত সন্তান। অনেক আগে পাকস্থলির ক্যান্সারে মারা গেছেন তার স্বামী। বর্ণনাতীত দরিদ্র এই পরিবার। বৌদ্ধর একটি মূর্তি রাখা হয়েছিল, এমন একটি স্থানে পাথরে স্তম্ভের কাছে এক গুহার মধ্যে সন্তানদেরকে নিয়ে বসবাস করেন ফাতেমা। বিগত সরকারের অধীনে নিয়মিত সুষ্ঠুভাবে আটা ও তেল সরবরাহ পেতেন ফাতেমা। কিন্তু তালেবানরা ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে তা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। কাছেই এক কৃষকের জমি থেকে আগাছা পরিষ্কার করে দিয়ে সামান্য অর্থ আয় করেন ফাতেমা এখন। কিন্তু এখন সেখানে যে খরা দেখা দিচ্ছে, তাতে জমিতে কোনো ফসল বেঁচে থাকবে বলে মনে হয় না। এর অর্থ ফাতেমার হাতে কোনো কাজ থাকবে না।

এই ভয়াবহ অবস্থার শিকার হয়ে কিছু অভিভাবক তাদের শিশু কন্যাকে অনেক বেশি বয়সী পুরুষের কাছে বিয়ের নামে বিক্রি করে দিয়েছেন। এই কাজটি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ফাতেমা। যদি তার পরিবারের কাছে খাদ্য সরবরাহ দেয়া শুরু না হয়, তাহলে তার সন্তানরা অনাহারের মুখোমুখি হবে। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের চূড়ায়, গায়ে তুষার জমা শুরু হয়েছে। বাতাস রুক্ষ্ম হয়ে উঠেছে। দ্রুতই শীত নামবে সেখানে। ফাতেমা ও তার পরিবারের মতো বহু মানুষ ধ্বংসের এক দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে খুব শিগগিরই।