পরলোকে লতা : শোকার্ত রাজনীতিবিদ, ক্রিকেটার ও বলিউড তারকারা

Published: 6 February 2022

পোস্ট ডেস্ক :


‘শায়েদ ফির ইস জনম মে মুলাকাত হো না হো… না’, এই জন্মে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে আর দেখা হবে না কারও। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সংগীতে। মারাঠি ভাষায় তাঁর আত্মকথন- লতা সুর কথায়- তিনি লিখেছিলেন, আমার নশ্বর দেহে যেদিন প্রাণ থাকবে না, সেদিনও আমার সঙ্গে গান থাকবে। রোববার মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ৯২ বছর বয়সে সকাল ৮টা ১২ মিনিটে লতা প্রয়াত হলেন। কিন্তু থেকে গেলেন তাঁর গানে। ভারতের জাতীয় কণ্ঠ যেন এদিন রুদ্ধ হলো। ভারত সরকার দুদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বলিউড তাঁর প্রয়াণে কার্যত কাঁদছে। ক্রিকেটের দুর্দান্ত ফ্যান লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকর থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত সবাই। লতা মঙ্গেশকরের দেহ মুম্বাইয়ের শিবাজী পার্কে রাখা থাকবে সাধারণ ভক্তদের দর্শনের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। লতার মৃত্যুতে শোক ছড়িয়ে পড়েছে এই উপমহাদেশের সর্বত্র। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ছাড়াও আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা থেকেও শোকবার্তা আসছে। পাকিস্তান একসময় বলেছিলো, লতা মঙ্গেশকরকে আমাদের দিয়ে দাও তোমরা কাশ্মীর নিয়ে নাও। সেই পাকিস্তান আজ শোকে মূহ্যমান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শোক প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মোট ছত্রিশটি ভাষায় গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ১৮৫টি বাংলা গান গেয়েছেন। একসময় তাঁর মেরে বতন কি লোগ গানটি শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহর লাল নেহেরু কেঁদে ভাসিয়েছিলেন। লতার সংগীত জীবনের শুরুটা অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। মারাঠি সংগীতে প্লে ব্যাক করেছেন, মারাঠি ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন। ১৯৪৮ সালে সুরকার গুলাম হায়দার তাঁকে পরিচালক শশধর মুখোপাধ্যায় এর কাছে নিয়ে যান শহীদ ছবিতে গান গাওয়ানোর জন্য।

শশধর তাঁকে বাতিল করে দেন লতার গলা অত্যন্ত চিকন বলে। সেই সময় গুলাম হায়দার বলেছিলেন, একসময় অসমুদ্র হিমাচল নতজানু হবে এই শিল্পীর কণ্ঠস্বরে। বাস্তবে হয়েওছিল তাই। সরস্বতী বিসর্জনের দিনই বিষর্জিত হলেন সরস্বতীর বর পুত্রী। একসময় মালদ থেকে পায়ে হেঁটে স্টুডিওতে আসতেন বাসে চড়ার পয়সা ছিল না বলে। ক্যান্টিনে শুধু চা বিস্কুট খেয়ে দিন কাটাতেন। সেই লতার কণ্ঠের জাদুতে সম্মোহিত হয়েছিল বিশ্ব। লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণ তাই একটি যুগাবসান।