আফগানিস্তানের রিজার্ভ নগদ দ্রুত আনফ্রিজ করার আহ্বান চীন-পাকিস্তানের

Published: 7 February 2022

পোস্ট ডেস্ক :


আফগানিস্তানকে মানবিক সংকট থেকে মুক্ত করতে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদানের ওপর জোর দিচ্ছে চীন-পাকিস্তান। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই প্রসঙ্গে রবিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। শুক্রবার শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেজিংয়ে আমন্ত্রিত বিদেশী নেতাদের মধ্যে ইমরান খানও ছিলেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ”চীন ও পাকিস্তান আফগানিস্তানের রিজার্ভ নগদ দ্রুত আনফ্রিজ করার পাশাপাশি আফগানিস্তানকে আরো সহায়তা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।”চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর নামে পরিচিত বহু-বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দুই পক্ষ আফগানিস্তানে CPEC-এর সম্প্রসারণের বিষয়ে আফগানিস্তানের সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত।”CPEC বেইজিংয়ের গ্লোবাল বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ফ্ল্যাগশিপ হিসেবে সমাদৃত, যা চীনা বিনিয়োগে পাকিস্তানে রাস্তা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্প তৈরি করে। গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তার আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠী প্রথমবার যখন দেশের ক্ষমতায় এসেছিল তখনও ব্যাপক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তালেবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলিকে অবিলম্বে আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ জব্দ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল, যার বেশিরভাগই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ নিউইয়র্কে রক্ষিত ছিল। কঠোর নিষেধাজ্ঞাগুলি ব্যাপকভাবে সাহায্য-নির্ভর আফগান অর্থনীতিকে পতনের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং সংঘাত-বিধ্বস্ত দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

জাতিসংঘের অনুমান যে আফগানিস্তানের প্রায় ২৪ মিলিয়ন মানুষ যা জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি তারা আজ তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন। সহায়তাকারী সংস্থাগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য শাস্তিমূলক আর্থিক বিধিনিষেধ আফগানদের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সাহায্যের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাইডেন প্রশাসন এই জাতীয় উদ্বেগ স্বীকার করলেও এর সমাধানের বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি। গত মাসে, জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছিলেন যে ওয়াশিংটন আফগানিস্তানের নগদ সংকট কমানোর বিকল্প পথগুলি খতিয়ে দেখছে। সেই সুযোগে চীন এবং পাকিস্তান সাম্প্রতিক মাসগুলিতে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী তালেবান সরকারের সাথে যোগাযোগ করে সঙ্কট-বিধ্বস্ত দেশটিকে মানবিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর উপায়গুলি অন্বেষণ করে দেখছে । চীন এবং পাকিস্তান আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ হওয়ার দরুন এই আশংকায় রয়েছে যে , দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে আফগান নাগরিকরা ব্যাপকভাবে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেই সঙ্গে আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসীরা আফগান মাটিকে নিরাপদ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেসিডেন্ট জিংপিং কে উদ্ধৃত করে বলেছে যে, তিনি পাকিস্তান সরকারের সাথে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে উভয় দেশের জনগণের জন্য বৃহত্তর উন্নয়ন সাধন করা যায় ।” চীন ও পাকিস্তান উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক সংযোগ এবং সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “পরিবর্তিত বিশ্বে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।” চীনা কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট বা ইটিআইএম চীনের পশ্চিম জিনজিয়াং সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার জন্য আফগান মাটি ব্যবহার করে। এদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী ইটিআইএম দাবি করেছে যে তারা জিনজিয়াংয়ের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়কে সমর্থন করার জন্য লড়াই করছে। পাকিস্তানি নেতারা আবার দাবি করেছেন , নিষিদ্ধ পাকিস্তানি তালেবানরা আফগান সীমান্তের দিকে অভয়ারণ্য স্থাপন করেছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার আয়োজন করেছে। বেইজিং এবং ইসলামাবাদ উভয়ই আফগানিস্তানকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার জন্য তালেবানদের উপর চাপ দিচ্ছে। রবিবার জারি করা যৌথ বিবৃতিতে, শি এবং খান তালেবান শাসকদের সাথে চীন-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ত্রিপক্ষীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সংলাপ পুনরায় চালু করার বিষয় নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমিত করতে এবং নিরাপত্তাসহ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা উন্নত করতে বেইজিং বর্তমানে আফগান সরকারের সাথে আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করেছে।